বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১১

লাল গেঞ্জি, পাঁচ টাকা ও পাউরুটি

রাজীব আর আমি প্রায়ই মজা করতাম: মতি ভাইয়ের চেয়ে এই পত্রিকায় আমাদের দাম বেশি। মতি ভাইয়ের নাম ছাপা হয় শুধু প্রিন্টার্স লাইনে। আর আমাদের নাম প্রতিদিন অন্তত গোটা দুইু জায়গায় ছাপা হতো!
আট বছর আগের কথা বলছি। আমি আর রাজীব (হাসান), তখন মাত্র শুরু করেছি প্রথম আলোয়। এক ঝাক প্রদায়কের ‘যায় যায় দিন’ গমনের ফলে শূন্যস্থান পূরনে যত্রতত্র দু হাতে, চার হাতে লিখছি। সে এক রোমান্টিক সময় ছিল, তাই না রাজীব?
সেই যে লাল একটা ছেড়া গেঞ্জি। পাচটা টাকা আর একটা পাউরুটি!
আহা, সেই দিনগুলো পার করে অনেক দূর চলে এসেছি। সেই দিনগুলো পার করে কখন যেন আমরা প্রথম আলোর `কর্মচারী' হয়ে গেলাম। ক্রীড়া বিভাগে কাজ করতেই থাকলাম, করতেই থাকলাম। মাঝে কিছুদিন অত্যন্ত ব্যর্থতার সঙ্গে ‘অন্য আলো’ সম্পাদনা করলাম।
টেরই পেলাম না, কখন যেন রোমান্টিসিজমটা পার করে প্রোফেশানিলজমে ঢুকে পড়েছি। হ্যা, পেশাদার হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। অর্ডারি লেখা লিখতাম। হাজার হাজার শব্দ প্রসব, সেগুলো নামে-নামবিহীন ছাপা হওয়া; বোধই হত না যে, একটা বড় পত্রিকায় কাজ করছি।
আজ হঠাৎ এতোদিন পর এইসব নস্টালজিয়া কেন? আজ আমি আর প্রথম আলোতে নেই। কালকের দিনটা বাদে পরশু, আমার নতুন পরিচয় `প্রতিষ্ঠিত' হতে যাচ্ছে সারা দেশে। নতুন পত্রিকা ‘সকালের খবর’ আলোর মুখ দেখবে ১০ এপ্রিল। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে সকালের খবরের একজন হয়ে যাবো।
পুরোনো হয়ে যাবে প্রথম আলো অধ্যায়।
পুরোনো হয়ে যাবে? হয়তো। তবে ফুরিয়ে যাওয়ার নয়।
মিটুন দা (আনিসুল হক), সাজ্জাদ (শরীফ) ভাই, সুমি দি (সুমনা শারমীন), পল্লব (মোহাইমেন), সিমু (নাসের), ফিরোজ (জামান) ভাই, মশি ভাই, জ্যাক ভাই (জাকারিয়া ভাই), শাহেদ ভাই, মাসুম ভাই (শওকত হোসেন), তৈমুর, ফারুক ভাই এবং সদ্যাহাস্যময় বড্ড ভালোমানুষ জাহিদ (রেজা নূর) ভাই; সব্বার নাম মনে আসুক আর নাই আসুক; সব্বাইকে খুব মিস করি।
সবচেয়ে বেশি মিস করি শুভ্রদা (উৎপল শুভ্র), পবিত্রদা, মনি ভাই (তারেক মাহমুদ), মাসুদ ভাই, ফিরোজ ভাই, মিলন ভাই, রুবেল ভাই এবং রাজীব-রনিকে! আহারে আমাদের স্পোর্টস পরিবার। আমি আজ ওখানে নেই.....
এই ক্রন্দন কোনোক্রমেই আফসোস নয়। প্রথম আলো ছেড়ে বিন্দুমাত্র আফসোস আমার নেই। এই কান্নার ভেতরও একটা রোমান্টিসিজম আছে।
আজ এই বেলায় কথাগুলো লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, রোমান্টিসিজমটা শেষ হয়ে যায়নি। কোথায় যেন টিকে ছিল সে। কোথায় যেন টুক টুক করে শব্দ করতো সে।
এই একটা কারণে অন্তত অজস্র ধন্যবাদ, মতি ভাই। এখনও প্রথম আলো রোমান্টিসিজমটা ধরে রাখতে পেরেছে।

নোট:
এই লেখার প্রতিক্রিয়ায় রাজীব হাসান: 
দেবব্রতর লেখার প্রশংসা করছি। দশে আট দিলাম। দশে আট যাদের কাছে কম মনে হচ্ছে তাদের বলি, প্রচণ্ড ঈর্ষাজনিত কারণে দেবব্রর খুব ভালো লেখাকেও আমি দশে দুইও দিইনি কোনো দিন!

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites