লেখাটি রস আলোতে ছাপা হইয়াছিল। যারা পড়েছেন, মনে মনে (বা প্রকাশ্যে) গালি দিন। যারা পড়েননি, তারাও পড়ে গালি দিতে পারেন।
‘অনেক কথা যাও যে বলে, কোন কথা না বলি। তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি।’
আমি কিছু বলছি না। তবে আপনি ইচ্ছা করলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথার অন্য রকম মানে করতে পারেন। ভাবতে পারেন, রবি ঠাকুরেরও একই সমস্যা ছিল। সমস্যা আর কী? সেই ভাসা-ভাসা ভাষাজ্ঞান নিয়ে চলে আসা সমস্যা (রবীন্দ্রনাথের নাম করতেই কেমন মিল চলে এসেছে, এখন শুধু ছন্দটা এলেই হয়)।
ভাষা নিয়ে যাতনা এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন চোখের জলেও কাজ হচ্ছে না। আমাদের মতো নিতান্ত বকলমদের কথা বাদ দিন। টেলিভিশনে খেলোয়াড়দের চোখের জল-নাকের জল দেখেও কী বুঝতে পারেন না বেদনাটা আসলে কোথায়?
ইংরেজি বলতে হবে, এ ভয়েই নাকি আমাদের ক্রিকেটাররা ম্যাচ-ট্যাচ জিতছেন না। এমনকি নিন্দুকেরা বলছেন, অনেকেই নাকি এই ভয়ে ইচ্ছা করে আউট-টাউটও হয়ে যাচ্ছেন (দেখেন ভাই, এর মধ্যে আবার যোগ্যতা-ফোগ্যতার প্রশ্ন টেনে আনবেন না)।
পাছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে আবার ইংরেজিতে সাক্ষাৎকার দিতে হয়!
আমাদের ক্রিকেটারদের কথা আর কী বলি! পাকিস্তান দলের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, তারা আর ইংরেজিতে কথাই বলবে না। এটা পাকিস্তানিদের খুব মাতৃভাষাপ্রীতি ভেবে যাঁরা আবেগে চোখের জল ফেলছিলেন, তাঁরা একটু আসল সত্যটা তলিয়ে দেখুন। আরে ভাই, ইংরেজি বলতে গেলে পারতে তো হবে। তারা এখানে আমাদের লাইনেই দাঁড়ানো।
পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের মধ্যে ইংরেজি বলার জন্য সবচেয়ে ‘খ্যাত’ ইনজামাম-উল হক (অধুনা সাবেক)। এক ‘ইনশাল্লাহ’ ছাড়া ইংরেজিতে আর কোনো শব্দই সহজে আসে না তাঁর। ইনজামামের ইংরেজি নিয়ে গল্পের অভাব নেই। একবার রমিজ রাজা নাকি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ইনজিকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমাদের দলটাকে তুমি লড়াকু একটা মেশিনে পরিণত করলে কী করে? দেখলে মনে হয় ক্ষুধার্ত (হাংরি) বাঘ।’ ইনজি যথারীতি হেসে উত্তর দিলেন, ‘না, আমরা তো ক্ষুধার্ত না। আমাদের এখন অনেক টাকা আর সব সময় হালাল মাংস খাই’!
ইনজামামকে নিয়ে এ যাবৎকালের সেরা ঘটনাটা বলা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। আপনারা অনুমতি দিলে বলেই ফেলি। ম্যাচ শেষে ইনজামামকে সাংবাদিক কী জিজ্ঞেস করতে পারেন, তা অনুমান করে উত্তর নাকি তৈরিই রাখতেন। প্রথম প্রশ্ন যাই হোক ইনজামাম ওই মুখস্থ কটা লাইন বলবেন।
সমস্যাটা হলো সেদিন ম্যাচ শেষে টনি গ্রেগ নাকি প্রথম প্রশ্নটা করেছিলেন, ‘ইনজি, তোমার স্ত্রীর তো বাচ্চা হবে। তুমি নিশ্চয়ই খুব খুশি?’ তৈরি থাকা ওই উত্তরটাই শুনিয়ে দিলেন ইনজামাম, ‘এ কৃতিত্ব আমার একার নয়। দলের সবাইকে এ জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। সবাই যার যার মতো ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ ধন্যবাদ আফ্রিদীকে। সে ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। ওদিকে বব উলমারও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন এবং নির্দেশ দিচ্ছিলেন। আশা করি ভবিষ্যতেও আমরা এ রকম ফল আনতে পারব।’
বুঝতে না পেরে উল্টাপাল্টা করে ফেলার ব্যাপারটার বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বেলায়ও অভাব নেই। জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার ইংল্যান্ডে গেছেন জুতা কিনতে (আসলে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন)।
দোকানে ঢুকেই দোকানিকে বললেন, ‘ক্যান আই হেল্প ইউ?’ দোকানি তো বুঝে পায় না, তার আবার কী সাহায্য লাগতে পারে। বেচারা যখন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে, তখন পাশ থেকে এক সিনিয়র ক্রিকেটার বললেন, ‘ওই ব্যাটা। বল্, ক্যান ইউ হেল্প মি?’
দোকানির প্রশ্ন যখন উঠল, আরেকটা দোকান সংক্রান্ত ঘটনা শোনা যাক। ‘এ’ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে গেছেন জহুরুল ইসলাম অমি। বড় নোট ভাঙাতে হবে। তিনি প্রথমে ইংরেজিতেই বলেছিলেন ‘চেঞ্জ’ দিতে। দোকানি তো বোঝে না। ওই যে, ইনজামামের ভাই তো। শেষ পর্যন্ত অমি ভাবলেন, উর্দুজ্ঞানটাই কাজে লাগানো যাক, ‘ভাই, এ নোট কো চুরমার কর দো!’ চুরমার করা মানে তো ভেঙেই ফেলা, তাই না?
তার পরও ‘সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার’ মানতে পারছেন না? তাহলে ডেভ হোয়াটমোরের একটি গল্প শুনে নিন। প্রথম আলো-গ্রামীণফোন বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হবে। রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে দাওয়াত কার্ডও নিয়ে বের হয়েছি। তৎকালীন কোচ ডেভের সামনেই সবাইকে কার্ড দিলাম। ভাবলাম, এদের দিলাম, কোচকে দেব না! বেচারা রাগ করবেন না? শেষ পর্যন্ত একটি কার্ডের ওপর ইংরেজিতে নাম ঠিকুজি লিখে বাড়িয়ে দিলাম। ভেতরে বাংলায় লেখা দাওয়াত পড়তে পারবেন কি না, ভেবে একটু ভয়ে ছিলাম।
কার্ড দেখেই ডেভ ‘নো, নো’ করা শুরু করলেন। ব্যাপার কী? বলেন, ‘আমি খুব ব্যস্ত, কোনো দাওয়াত রাখতে পারব না।’ কোনোক্রমে ভেঙেচুরে বললাম, ‘বাবা, ভেতরে খুলে দেখো।’ বলছি আর ভাবছি, ভেতরের বাংলা দেখে আরও চটবেন। ও হরি! কার্ড খুলেই হেসে উঠলেন। বলেন কিনা, ‘ও আচ্ছা! উটপল আমাকে বলেছে। পোরোঠোম আলো?’
আমি তো আমি, ক্রিকেটাররাও সবাই অবাক, ‘ব্যাটা বুঝল কী করে?’ জিজ্ঞেস করতেই একগাল হেসে প্রথম আলোর লোগোটা দেখিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এটা পড়তে পারি।’ এবার বিশ্বাস হয়েছে, মাতৃভাষাই শ্রেয়?
‘অনেক কথা যাও যে বলে, কোন কথা না বলি। তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি।’
আমি কিছু বলছি না। তবে আপনি ইচ্ছা করলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথার অন্য রকম মানে করতে পারেন। ভাবতে পারেন, রবি ঠাকুরেরও একই সমস্যা ছিল। সমস্যা আর কী? সেই ভাসা-ভাসা ভাষাজ্ঞান নিয়ে চলে আসা সমস্যা (রবীন্দ্রনাথের নাম করতেই কেমন মিল চলে এসেছে, এখন শুধু ছন্দটা এলেই হয়)।
ভাষা নিয়ে যাতনা এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন চোখের জলেও কাজ হচ্ছে না। আমাদের মতো নিতান্ত বকলমদের কথা বাদ দিন। টেলিভিশনে খেলোয়াড়দের চোখের জল-নাকের জল দেখেও কী বুঝতে পারেন না বেদনাটা আসলে কোথায়?
ইংরেজি বলতে হবে, এ ভয়েই নাকি আমাদের ক্রিকেটাররা ম্যাচ-ট্যাচ জিতছেন না। এমনকি নিন্দুকেরা বলছেন, অনেকেই নাকি এই ভয়ে ইচ্ছা করে আউট-টাউটও হয়ে যাচ্ছেন (দেখেন ভাই, এর মধ্যে আবার যোগ্যতা-ফোগ্যতার প্রশ্ন টেনে আনবেন না)।
পাছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে আবার ইংরেজিতে সাক্ষাৎকার দিতে হয়!
আমাদের ক্রিকেটারদের কথা আর কী বলি! পাকিস্তান দলের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, তারা আর ইংরেজিতে কথাই বলবে না। এটা পাকিস্তানিদের খুব মাতৃভাষাপ্রীতি ভেবে যাঁরা আবেগে চোখের জল ফেলছিলেন, তাঁরা একটু আসল সত্যটা তলিয়ে দেখুন। আরে ভাই, ইংরেজি বলতে গেলে পারতে তো হবে। তারা এখানে আমাদের লাইনেই দাঁড়ানো।
পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের মধ্যে ইংরেজি বলার জন্য সবচেয়ে ‘খ্যাত’ ইনজামাম-উল হক (অধুনা সাবেক)। এক ‘ইনশাল্লাহ’ ছাড়া ইংরেজিতে আর কোনো শব্দই সহজে আসে না তাঁর। ইনজামামের ইংরেজি নিয়ে গল্পের অভাব নেই। একবার রমিজ রাজা নাকি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ইনজিকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমাদের দলটাকে তুমি লড়াকু একটা মেশিনে পরিণত করলে কী করে? দেখলে মনে হয় ক্ষুধার্ত (হাংরি) বাঘ।’ ইনজি যথারীতি হেসে উত্তর দিলেন, ‘না, আমরা তো ক্ষুধার্ত না। আমাদের এখন অনেক টাকা আর সব সময় হালাল মাংস খাই’!
ইনজামামকে নিয়ে এ যাবৎকালের সেরা ঘটনাটা বলা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। আপনারা অনুমতি দিলে বলেই ফেলি। ম্যাচ শেষে ইনজামামকে সাংবাদিক কী জিজ্ঞেস করতে পারেন, তা অনুমান করে উত্তর নাকি তৈরিই রাখতেন। প্রথম প্রশ্ন যাই হোক ইনজামাম ওই মুখস্থ কটা লাইন বলবেন।
সমস্যাটা হলো সেদিন ম্যাচ শেষে টনি গ্রেগ নাকি প্রথম প্রশ্নটা করেছিলেন, ‘ইনজি, তোমার স্ত্রীর তো বাচ্চা হবে। তুমি নিশ্চয়ই খুব খুশি?’ তৈরি থাকা ওই উত্তরটাই শুনিয়ে দিলেন ইনজামাম, ‘এ কৃতিত্ব আমার একার নয়। দলের সবাইকে এ জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। সবাই যার যার মতো ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ ধন্যবাদ আফ্রিদীকে। সে ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। ওদিকে বব উলমারও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন এবং নির্দেশ দিচ্ছিলেন। আশা করি ভবিষ্যতেও আমরা এ রকম ফল আনতে পারব।’
বুঝতে না পেরে উল্টাপাল্টা করে ফেলার ব্যাপারটার বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বেলায়ও অভাব নেই। জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার ইংল্যান্ডে গেছেন জুতা কিনতে (আসলে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন)।
দোকানে ঢুকেই দোকানিকে বললেন, ‘ক্যান আই হেল্প ইউ?’ দোকানি তো বুঝে পায় না, তার আবার কী সাহায্য লাগতে পারে। বেচারা যখন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে, তখন পাশ থেকে এক সিনিয়র ক্রিকেটার বললেন, ‘ওই ব্যাটা। বল্, ক্যান ইউ হেল্প মি?’
দোকানির প্রশ্ন যখন উঠল, আরেকটা দোকান সংক্রান্ত ঘটনা শোনা যাক। ‘এ’ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে গেছেন জহুরুল ইসলাম অমি। বড় নোট ভাঙাতে হবে। তিনি প্রথমে ইংরেজিতেই বলেছিলেন ‘চেঞ্জ’ দিতে। দোকানি তো বোঝে না। ওই যে, ইনজামামের ভাই তো। শেষ পর্যন্ত অমি ভাবলেন, উর্দুজ্ঞানটাই কাজে লাগানো যাক, ‘ভাই, এ নোট কো চুরমার কর দো!’ চুরমার করা মানে তো ভেঙেই ফেলা, তাই না?
তার পরও ‘সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার’ মানতে পারছেন না? তাহলে ডেভ হোয়াটমোরের একটি গল্প শুনে নিন। প্রথম আলো-গ্রামীণফোন বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হবে। রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে দাওয়াত কার্ডও নিয়ে বের হয়েছি। তৎকালীন কোচ ডেভের সামনেই সবাইকে কার্ড দিলাম। ভাবলাম, এদের দিলাম, কোচকে দেব না! বেচারা রাগ করবেন না? শেষ পর্যন্ত একটি কার্ডের ওপর ইংরেজিতে নাম ঠিকুজি লিখে বাড়িয়ে দিলাম। ভেতরে বাংলায় লেখা দাওয়াত পড়তে পারবেন কি না, ভেবে একটু ভয়ে ছিলাম।
কার্ড দেখেই ডেভ ‘নো, নো’ করা শুরু করলেন। ব্যাপার কী? বলেন, ‘আমি খুব ব্যস্ত, কোনো দাওয়াত রাখতে পারব না।’ কোনোক্রমে ভেঙেচুরে বললাম, ‘বাবা, ভেতরে খুলে দেখো।’ বলছি আর ভাবছি, ভেতরের বাংলা দেখে আরও চটবেন। ও হরি! কার্ড খুলেই হেসে উঠলেন। বলেন কিনা, ‘ও আচ্ছা! উটপল আমাকে বলেছে। পোরোঠোম আলো?’
আমি তো আমি, ক্রিকেটাররাও সবাই অবাক, ‘ব্যাটা বুঝল কী করে?’ জিজ্ঞেস করতেই একগাল হেসে প্রথম আলোর লোগোটা দেখিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এটা পড়তে পারি।’ এবার বিশ্বাস হয়েছে, মাতৃভাষাই শ্রেয়?