বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

আমাদের ধনী খেলোয়াড়রা


সিদ্দিকুর রহমানের বড় শখ, টাইগার উডসের সঙ্গে দেখা করবেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাগড়া না দিলে হয়তো সদ্য শেষ হওয়া ইউএস ওপেনেই সাক্ষাত্ হয়ে যেত। সে না হোক; একটা জায়গায় উডসকে ছুঁয়ে ফেললেন সিদ্দিকুর। বিশ্বাস হচ্ছে না?
টাইগার উডস এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী খেলোয়াড়। আর সিদ্দিকুর রহমান এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী খেলোয়াড়। ফলে সিদ্দিকুরকে ‘বাংলাদেশের টাইগার উডস’ তো বলতেই পারেন। অন্তত আয়ের বিবেচনায়।
ছোটবেলায় জানতাম, খেলতে হলে টাকা ব্যয় করতে হয়। ক্লাবের চাঁদা দিতে হয়, ফুটবল কেনার জন্য টাকা দিতে হয়; আরও কত কী! মোট কথা খেলা মানে পকেটের টাকা ব্যয়। আর এখন বুঝতে পারছি, খেলা মানে আয়!
আয় মানে কত টাকা? সে কথা শুনে আর কাজ নেই। টাইগার উডস, কোবি ও’ব্রায়েনরা নাকি বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামাচ্ছেন স্রেফ খেলাধুলা করে! মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বুঝতে পারছেন? বাংলায় টাকা করলে কোটি কোটি টাকা বললেও কুলাবে না।
আচ্ছা, দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার কী? আমাদের দেশে ও রকম বিলিয়ন ডলার আয় করে ফেলা খেলোয়াড় এখনও জন্মাননি। তাই বলে একেবারে সবাই খালি হাতে বসে আছেন, এমন ভাবারও কারণ নেই। এ বাংলাদেশেরই বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এখন বছরে কোটি টাকার ওপর আয় করছেন।
এ পর্যন্ত সব জানা কথা। সবাই মোটামুটি অনুমান করতে পারি, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এখন ভালোই আয় করেন। কিন্তু সেটা কত? আর দেশের কোন খেলোয়াড় সবচেয়ে বেশি আয় করেন?
বৈশ্বিকভাবে এ ধরনের যেসব তালিকা তৈরি হয়, তা করে সাধারণত ‘ফোর্বস’ বা ‘ফরচুন’ ধরনের কোনো পত্রিকা। এদের তালিকা দেখে আমরা বুঝতে পারি, এ বছরের শীর্ষ উপার্জনকারী খেলোয়াড় কে? কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম কোনো উদ্যোগ তো নেই। তাই নিজেদেরই একটা উদ্যোগ হাতে নিতে হল।
খুব ভুল হয়েছিল কাজটা। উদ্যোগটা হাতে নিয়েই দেখা গেল, নানারকম তথ্য সঙ্কট। প্রায় কোনো ধরনের নিশ্চিত তথ্যই হাতে পাওয়া যায় না। তারপরও কাজটা শেষ করতে হল। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া হিসাবগুলো মিলিয়ে একটা তালিকা দাঁড় করানো হল।
হিসাব দাঁড় করানো শেষ হতে আমরা আবিষ্কার করলাম, বাংলাদেশের শীর্ষ উপার্জনকারী দেশের এক নম্বর গলফার সিদ্দিকুর রহমান। সর্বশেষ বছরে তার মোট আয় ছিল প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা। ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সামান্য বেশি নিয়ে বছরে দ্বিতীয় সেরা উপার্জনকারী হলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সিদ্দিকের পর সেরা পাঁচে পরের চারটি নামই চার ক্রিকেটারের। বাকিরা হলেন-মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
তালিকা তো জানলেন। এবার হিসাব পদ্ধতি নিয়ে দু কথা বলা যাক। আয়ের হিসাব করতে গিয়ে প্রধান যে ঝামেলাটা পোহাতে হয়েছে, সেটা দুনিয়ার সব হিসাবকারী প্রতিষ্ঠানকেই পোহাতে হয়-বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষকের হিসাব। পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড়েরই এ হিসাবটি পরিষ্কার করে প্রকাশ করা হয় না।
তবে বাইরের দেশগুলোতে সুবিধা হল, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের একজন এজেন্ট থাকেন। যারা হিসাব করতে চায়, তারা লোক লাগিয়ে ওই এজেন্টের অফিস থেকে একটা হিসাব বের করে ফেলে। আমাদের এখানে ও রকম ডেডিকেটেড এজেন্টের কোনো বালাই কারও নেই।
ফলে এ ক্ষেত্রে খানিকটা অনুমান ও খানিকটা সরাসরি বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর সাহায্য নিতে হয়েছে। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো তাদের নৈতিক কারণেই কোনো খেলোয়াড়ের প্রকৃত আয় প্রকাশ করে না। ফলে আমাদেরও ‘সোর্স’ থেকে পাওয়া আনুমানিক হিসাব দিতে হয়েছে।
খেলে সরাসরি খেলোয়াড়রা যে টাকা পান, এটাও জানাটা এক মুশকিল। গলফার সিদ্দিকুরের ক্ষেত্রে এ সমস্যা ছিল না। তার প্রতিটি টুর্নামেন্টে পাওয়া পুরস্কারের অর্থ পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে এশিয়ান টুরের ওয়েবসাইটে। কিন্তু ঝামেলা হল ক্রিকেটারদের আইপিএল ও কাউন্টি চুক্তি নিয়ে।
আইপিএল থেকে সাকিব, মাশরাফি ও আশরাফুল বছরে ঠিক কত টাকা পেয়েছেন, কত টাকা ট্যাক্স হিসেবে কেটে রাখা হয়েছে-ব্যাপারগুলো পরিষ্কার নয়। তারপরও মূল নিলামে যে টাকা বলা হয়েছিল, তার থেকে সাধারণ আয়কর বিয়োগ করে হিসাবটা করা হল।
আরও মুশকিল হল সাকিবের কাউন্টি আয়ের হিসাবটা বের করতে গিয়ে। কাউন্টিতে তো আর নিলাম হয় না, যে এর কোনো ডকুমেন্টস পাওয়া যাবে। কাউন্টি কর্তৃপক্ষ কখনই তাদের সঙ্গে খেলোয়াড়ের চুক্তির অর্থপরিমাণ প্রকাশ করে না। তার ওপর সমস্যা হল, ওখানে টাকা দেওয়া হয় সপ্তাহ হিসাবে। তারপরও ইংল্যান্ডের কিছু সূত্র এবং সাকিবের কিছু ইঙ্গিত কাজে লাগানো হল।
পরের ঝামেলা হল, খেলোয়াড়দের বিসিবি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আয়। সংশ্লিষ্ট চার খেলোয়াড়ই এ-প্লাস বেতনভুক্ত ক্রিকেটার। ফলে তাদের বেতন জানাটা খুব কঠিন কাজ ছিল না। চারজনের বেতনই কাছাকাছি। সঙ্গে বছরে ৩০-এর বেশি ম্যাচ খেললে মাসিক বেতন ৫ হাজার টাকা করে বাড়বে এবং অধিনায়ক ও সহঅধিনায়ক কিঞ্চিত বেশি বেতন পান।
এটুকু হিসাব একরকম পরিষ্কার। কিন্তু ঝামেলা হল ম্যাচ ফি, পুরস্কার ও বোনাসের টাকা। ম্যাচ ফি নির্ধারিত, কিন্তু পুরস্কার বোনাস বিভিন্ন সময় ও টুর্নামেন্ট অনুযায়ী বিভিন্ন হয়ে থাকে। ফলে এ হিসাব কোনো খেলোয়াড় নিজে রেখে না থাকলে, কারও কাছে থাকা অসম্ভব। কোনো ক্রিকেটার সেই হিসাব গুছিয়ে রাখবেন এবং কাছে গেলে তালিকাটা বের করে দেবেন; সেটা আশা করা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিসিবির একটি সূত্র, সামান্য সহযোগিতা করে আনুমানিক একটা অঙ্ক দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
এবার আসুন আসল ঝামেলায়-ক্রিকেটারদের লিগ আয়। ক্রিকেটাররা কে কোন দলে কত টাকায় খেলতে নামছেন, এটা মৌসুমের আগে বেশ চাউর হয়ে যায়। ঝামেলা হল, সেই অঙ্কটা মৌসুম শেষে ঠিক থাকে না। অনেক সময় কম, বিরল ক্ষেত্রে বেশি টাকাও দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি টাকা না দিয়ে বাড়ি-গাড়ি দেওয়ারও নজির রয়েছে। তাহলে আমরা হিসাবটা করব কী দেখে? আমরা সরল পথ নিয়েছি। প্রথমে যে টাকায় ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, সেটাই হিসাবে নেওয়া হয়েছে।
এই তো গেল অঙ্কগুলো উদ্ধার করার হ্যাপা। কিন্তু ঝামেলা এখানেই শেষ নয়। তালিকা করতে বসে আরেকটা সমস্যায় পড়া গেল-আমরা কোন বছর ধরে হিসাবটা করব। শুধু ২০১০ সালের অ্যাওয়ের হিসাব করা যেত। কিন্তু তাতে ঝামেলা হল, ক্রিকেট মৌসুম ব্যাপারটা হয়ে থাকে দুই বছর মিলিয়ে; মানে প্রায় অর্থবছরের মতো।
আমরা তাই অর্থবছরকে অনুসরণ করলাম। তাতে একটা সুবিধা পাওয়া গেল, হিসাবটা এ সদ্য শেষ হওয়া জুন মাসের ৩০ তারিখে ‘ক্লোজ’ করা গেল। আবার অসুবিধাও হল। আইপিএল তো অর্থবছরে হয় না। এটা হয় ইংরেজি পঞ্জিকা অনুযায়ী। এবার সমস্যা হল, মাশরাফি-আশরাফুল ২০১০ পর্যন্ত আইপিএলে ছিলেন। তাদের পুরো ওই বছরের আয় কি আমরা হিসাবে নেব?
আবার সাকিব সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে খেলে এসেছেন। তার আয় কি এ হিসাবে ঢুকবে? এ ক্ষেত্রে তিনজনেরই বার্ষিক আয়কে অর্ধেক করে এ হিসাবে যোগ করেছি। ভাগ্যক্রমে, তিনজনের কেউ ২০১০ ও ২০১১ দুই মৌসুমেই আইপিএলে ছিলেন না। তাহলে হিসাবটা আরও জটিল হয়ে যেত।
এতক্ষণে সম্ভবত আমাদের হিসাব প্রক্রিয়াটা খানিকটা বোঝানো গেছে। এবার আমরা একটু শীর্ষ আয়কারীদের আয়টা খতিয়ে দেখি।
প্রথমেই সিদ্দিকুর রহমান। এ বেচারার বাড়তি আয় বলে তেমন কিছু নেই। ২০১০ সালের জুলাই থেকে শুরু করে এ বছরের গত মাসে কুইনস কাপ পর্যন্ত সিদ্দিক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে ৫ লাখ ৬ হাজার ৬২২ ডলার আয় করেছেন। বাংলাদেশি টাকায় যার অর্থ দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এটাই সিদ্দিকুরের মূল উপার্জন। সঙ্গে কিছু টাকা আসে তার পৃষ্ঠপোষক সংস্থা গ্রামীণফোন থেকে।
এ সংস্থার সঙ্গে সিদ্দিকুরের চুক্তি দ্বিমুখী। একটা বার্ষিক চুক্তি আছে, সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনের আলাদা প্রাপ্তি। যতদূর জানা গেছে, এ সংস্থা থেকে গড়ে বছরে লাখ তিরিশেক টাকা পেয়ে থাকেন সিদ্দিকুর।
এক নম্বরের ব্যাপারটা সহজ। সমস্যা শুরুই হল দ্বিতীয় স্থান থেকে। বিসিবি সূত্র বলছে, সাকিবের বার্ষিক বেতন ১৭ লাখ টাকার কাছাকাছি। ম্যাচ-ফি ও বোনাস মিলিয়ে গত অর্থবছরের সময় পেয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। লিগে মোহামেডান থেকে ৩৫ লাখ টাকার কাছাকাছি পেয়েছেন বলে গুঞ্জন। কাউন্টি থেকে গত মৌসুমে সাকিবের আয় ছিল প্রায় ৩৬ লাখ টাকা।
বাকি রইল আইপিএল ও বিজ্ঞাপন। আইপিএল থেকে সাকিব বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। যেহেতু তার আইপিএল অভিযান ২০১১ সালেই শুরু হয়েছে, তাই আমরা এ হিসাবে তার এক বছরের আয়ের অর্ধেককে অন্তর্ভুক্ত করেছি। বাকি রইল বিজ্ঞাপন।
বিজ্ঞাপন থেকে ঠিক কত টাকা গেল বছরে আয় করেছেন সাকিব? এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই নেই। খোদ সাকিবের কাছেও এর কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে বার্ষিক আয় আছে। আছে বিজ্ঞাপনপ্রতি আয়, আছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার আয়।
এসব আয়ের ব্যাপারে ভালো খোঁজখবর রাখেন এ রকম একজন বললেন, ‘সাকিব বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পেপসি, টিভিএস, ইউসিবির মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আছে। তামিম ও সাকিব দুজনেরই বিজ্ঞাপন ও এনডোর্সমেন্ট অনুসরণ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, দুজনেরই এ বাবদ বার্ষিক আয় প্রায় ১ কোটি টাকা করে।’
আমরা এ সংখ্যাটি গ্রহণ করে যোগ-বিয়োগ করে দেখেছি সাকিবের গত বছরে মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রায় একই রকম একটি হিসাব করে মাশরাফির আয় দেখা যাচ্ছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার কাছাকাছি।
বেতন-টেতন একই রকম ধরা হয়েছে। যদিও ম্যাচ ২০১০-১১ মৌসুমে খুব বেশি খেলেননি। তারপরও ম্যাচ-বোনাস মিলিয়ে মাশরাফির আয়ও ওই ২০ লাখ টাকার কাছাকাছি বলে ধরা হয়েছে। এ মুহূর্তে ইনজুরিতে ঘরে বসে থাকলেও বিজ্ঞাপনদাতারা মুখ ফিরিয়ে নেননি মাশরাফির দিক থেকে। পেপসিসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে বছরে ৭০ লাখ টাকার কাছাকাছি আয় আছে তার।
মাশরাফি আবাহনীতে ইনজুরির জন্য মাত্র গোটা তিনেক ম্যাচ খেললেও ক্লাব থেকে পেয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এবার আইপিএলের হিসাব। গত বছর পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে চুক্তিটা ছিল মাশরাফির। সেখান থেকে বছরে তার প্রাপ্তি ছিল ৪ কোটি টাকা। গত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সে ক্ষেত্রে তার খাতায় ২ কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
তামিম ইকবালের ক্ষেত্রে এসব আইপিএল-কাউন্টি জটিলতা নেই। তিনি কাউন্টি খেলতে গিয়েছেন এ মৌসুমে। যেটা আমাদের হিসাবকালের সময়ে আসবে না। ফলে তার বেতন, ম্যাচ ফি ও বোনাস, মোহামেডান থেকে পাওয়া প্রায় ৩৫ লাখ টাকা মূল হিসাবে আসছে। সঙ্গে বিজ্ঞাপনবাবদ তার আয় ছিল প্রায় ১ কোটি টাকা।
তালিকায় সর্বশেষ নামটি একটু বিস্ময় জাগানিয়া-মোহাম্মদ আশরাফুল। এখন ফর্মে নেই বলে একটু ‘আউট সাইডার’ বলে মনে হচ্ছে। তারপরও মনে রাখতে হবে আশরাফুলকেও এ তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে আইপিএল। আইপিএল থেকে আশরাফুলের এ সময়ে আয় ছিল প্রায় ৫৪ লাখ টাকা। এছাড়া লিগ থেকে আয় ছিল লাখ বিশেক।
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আশরাফুলের ব্যাপারটা একটু রহস্যময়। তিনি বললেন, তার আপাতত বিজ্ঞাপন থেকে কোনো আয় নেই। কিন্তু সূত্র বলছে, বর্তমানে আলাদা কোনো এনডোর্সমেন্ট আশরাফুলের না থাকলেও ২০১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। সে হিসাবে ওই ছয় মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো তার বিজ্ঞাপন থেকে আয় ছিল।
পুরো লেখাটি পড়ে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা, এ হিসাবগুলো নিরেট কিছু নয়। অনেক অনুমান, গোপন খবর ও সম্ভাবনা এ হিসাবে নেওয়া হয়েছে। যদিও পাঠক সান্ত্বনা পেতে পারেন, বিশ্বব্যাপী এ রকম হিসাব করার ক্ষেত্রে অনুমান-সম্ভাবনা-গোপন খবরকে গণনায় নেওয়া হয়।
আমরাও সে পদ্ধতিতে এগিয়েছি। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে হিসাবে ত্রুটি-বিচ্যুতি বিশ্বের অন্যসব জায়গার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এ হিসাবে বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া প্লট-ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন উপঢৌকনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেগুলো আবার মূল হিসাবকে প্রভাবিত করতেও পারে।
আসলে এতসব আলোচনার তো কোনো অর্থই হয় না।
আসল ব্যাপার, খেলোয়াড়রা এখন আয় করছেন। একটা সময় ছিল, আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা টাকার জন্য ফেডারেশন-বোর্ডের মুখে চেয়ে থাকতেন। আজ কিছুটা হলেও দিন বদলেছে।
আশা করা যাক, এক দিন এ রকম আয় অল্প কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের অধিকাংশ ক্রীড়াবিদ নানা খাত থেকে এমন অর্থের মুখ দেখবেন।জুন ২০১০ থেকে জুন ২০১১

শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়ের বার্ষিক আয়
সিদ্দিকুর রহমান
প্রাইজমানি ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রায়
বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষক ৩০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
..................................................................
মোট ৪ কোটি প্রায়

সাকিব আল হাসান
বিসিবি বেতন ১৭ লাখ টাকা প্রায়
ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ৩০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষক ১ কোটি টাকা (আনুমানিক)
লিগ ৩৫ লাখ টাকা
কাউন্টি ৩৬ লাখ টাকা প্রায়
আইপিএল ১ কোটি ৫০ লাখ
..................................................................
মোট ৩ কোটি ৬৮ লাখ প্রায়

মাশরাফি বিন মর্তুজা
বিসিবি বেতন ১৭ লাখ টাকা প্রায়
ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ২০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষক ৭০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
লিগ ২৫ লাখ টাকা
আইপিএল ২ কোটি টাকা প্রায়
(এক মৌসুমের অর্ধেক ধরে)
...................................................................
মোট ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা (প্রায়)

তামিম ইকবাল
বিসিবি বেতন ১৭ লাখ টাকা প্রায়
ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ৩০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষক ১ কোটি টাকা (আনুমানিক)
লিগ ৩৫ লাখ টাকা
...................................................................
মোট ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রায়

মোহাম্মদ আশরাফুল
বিসিবি বেতন ১৭ লাখ টাকা প্রায়
বিজ্ঞাপন ৩০ লাখ টাকা (বর্তমানে নেই)
ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ৩০ লাখ টাকা (আনুমানিক)
লিগ ২০ লাখ টাকা
আইপিএল ৫৪ লাখ টাকা
...................................................................
মোট ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites