সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

ডিয়েগোর প্রত্যাবর্তন


ছিয়াশির আর্জেন্টিনা দলে কি সব ক জন ‘ক্রেজি’ ফুটবলার ছিলেন নাকি!
আজও বাতিস্তার শেষ সময়ের আচরণ দেখে কথাটা মনে হল। আবার সেই লাভেজ্জি এবং একেবারেই আনকোরা এক বিগিলাকে মাঠে নামানোর দুঃসাহস দেখালে ভদ্রলোক।
তবে আপাতত লোকটির ওপর রাগ ঝেড়ে ফেলতে হচ্ছে যে, অবশেষে নিজের একগুয়েমি থেকে সরে এসে হলেও আর্জেন্টিনার এখনকার সম্ভাব্য সেরা একাদশকে মাঠে নামালেন। ছেলেমানুষী না করে হিগুয়েইন, আগুয়েরো, ডি মারিয়া ও গ্যাগোকে সেরা একাদশে খেলালেন।
ফলটা কি হল?
আপাত দৃষ্টিতে আর্জেন্টিনার ৩-০ গোলের জয়।
আসলে এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রাপ্তি লিওনেল মেসির খেলা।মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া কম্বিনেশনে মারাত্মক বোঝা পড়া। আবারও বলি, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মেসিকে আর্জেন্টিনার করে পাওয়া।
তর্কস্বাপেক্ষে এটা বলা যায় যে, আর্জেন্টিনার হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটা খেললেন বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপে আমরা নাইজেরিয়া, গ্রিসের বিপক্ষে মেসির কিছু ঝলক দেখেছি। তারপরও সেটা বার্সেলোনার মেসি ছিলেন না। কালও বার্সেলোনার পিক ফর্মের মেসি বলতে যা বোঝায়, তা হয়তো হলেন না।
সোজা হিসাব, সেটা হলেতো গোল পেতেন। কিন্তু যা করলেন, বার্সেলোনাতেও এমন কাণ্ড খুব একটা করেণ না। অন্তত ১৩ থেকে ১৫টি বল বাড়িয়েছেন, যেগুলো থেকে গোল হওয়া সম্ভব ছিল; এর মধ্যে ৩টি গোল হয়েছে।
বাকিগুলো না হওয়ার জন্য কিঞ্চিত দায় হিগুয়েইন ও শেষ পর্যায়ে লাভেজ্জির; কিছুটা ভাগ্যেরও। এসব হিসাব কোনো কাজের কথা নয়।
কথা হল, পুরো ম্যাচকে নিজের পায়ে মাতাতে থাকা এক মেসিকে পাওয়া গেল; যেটা আর্জেন্টাইনরা চায়।
কেন পাওয়া গেল? একটু খেলাটা বিশ্লেষন করে দেখা যাক।
লিওনেল মেসি বার্সেলোনায় যে জায়গায় খেলেন, বাতিস্তা নির্বোধের মতো সেই ফরোয়ার্ড পজিশনেই আর্জেন্টিনায় তাকে খেলাচ্ছিলেন। আরে ভাই, সে ক্ষেত্রেতো মেসিকে বল দেওয়ার জন্য জাভি-ইনিয়েস্তা চাই।
আপনার দলে জাভি-ইনিয়েস্তা কে? দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাম্বিয়াসো আর বানেগা! ফাউল!!
কাল যেটা হল মেসিকেই নামিয়ে আনা হল প্লে-মেকারের জায়গায়। তার সামনে ঠেলে দেওয়া হল আগুয়েরো ও হিগুয়েইনকে। বাতিস্তা মেসি কি জিনিস এটা বুঝতেই পারেননি; আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, এই লোক স্প্যানিশ লিগের খেলা দেখে কি না!
আরে মেসি তো আগে প্লে-মেকার। বার্সেলোনার পজেশনে খেলাতে সমস্যা হলে তাকে এখানে নামিয়ে নিন। কাল নামানোর সঙ্গে সঙ্গে ফল। প্রতিটা বল মাঝ মাঠে ধরলেন আর ত্রাস তৈরি করে বল বাড়িয়ে দিলেন বক্সে।
এখানেই আগুয়েরো আর হিগুয়েইনের কৃতিত্ব। প্রথম ম্যাচে এরকম নিচে নেমে কয়েকবার বল বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু তেভেজ তা পেলে আর পাসিং করেন না এবং লাভেজ্জির সে বল ধরারই ক্ষমতা নেই।
এখানেই হিগুয়েইন এক পা এগিয়ে গেলেন।গোল করতে পারেননি। কিন্তু এই রিয়াল স্ট্রাইকার প্রতিটি থ্রু-তে জায়গায় ছিলেন। ফলে প্রতিবারই আক্রমন জমেছে।
আর সেরা কাজটা করেছেন আগুয়েরো। মেসি বল দিয়েই সমানে মেসি-আগুয়েরো-হিগুয়েই-ডি মারিয়ার মধ্যে পাসিং করেছেন; তখন মনে হচ্ছিল: বার্সেলোনা। আসলে ওই যোগ্যতাটা থাকা চাই।
গাছ থেকে যোগ্যতা পড়ে না। চারটে আক্রমনভাগের খেলোয়াড়; চারটেই স্প্যানিশ শীর্ষ দলে খেলে। পাসিং এরা করতে পারবে না তো, ইতালির বাতিল লিগের খেলোয়াড়রা করবে এসে!
যাই হোক, অনেক মন্দ কথা বলেছি।
বাতিস্তার জন্য একটুও শুভ কামনা নেই। দল ভালো করুক।
কিন্তু শিরোনামের কি হল?
আগের দিন লিখেছিলাম: ফিরে আসুন ডিয়েগো। আজ লিখলাম: ডিয়েগোর প্রত্যাবর্তন!!
কই?


আপনি দেখেননি! আমি দেখেছি। মাঠে নব্বই মিনিট ধরে আমি ডিয়েগোর ছায়া দেখেছি। আমি নিশ্চিত খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফোনালাপ তাদের উজ্জীবিত করেছে।
দ্বিতীয় গোল করার পর আগুয়েরো যেভাবে গিয়ে মেসিকে জড়িয়ে ধরলেন, তাতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম: ডিয়েগো পাশে দাড়িয়ে তৃপ্তির হাসি হাসছেন।
তার মানসপুত্র ও তার জামাতা এভাবে জুটি বাধলে সেখানে ডিয়েগো না থেকে পারেন!!!!

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites