২০০২ বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
লাতিন আমেরিকা জোনের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, তখনকার ফিফা এক নম্বর হিসেবে বিশ্বকাপে ‘হটেস্ট ফেবারিট’ হয়ে কোরিয়া-জাপানে এসেছিল আর্জেন্টিনা।
কী সেই দল!
ভেরন, ক্যানিজিয়া, বাতিস্তুতা, ওর্তেগা, আইমার, আয়লা, ক্রেসপো; এদের ভিড়ে সে সময়ের ‘প্রডিজি’ স্যাভিওলার জায়গায় হয়নি ২৩ সদস্যের দলে! তর্কস্বাপেক্ষে আর্জেন্টিনার স্মরণকালের সেরা দল নিয়ে মার্সেলো বিয়েলসা শেষ পর্যন্ত কী করেছিলেন?
ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরে ও সুইডেনের সঙ্গে ড্র করে বিদায় নিয়েছিলেন প্রথম পর্ব থেকে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই পর্বতের মুষিক প্রসবের পর থেকে আর্জেন্টিনায় এক স্থায়ী ভিলেনের নাম: মার্সেলো বিয়েলসার।
সার্জিও বাতিস্তার জন্য কষ্ট লাগছে। এই লোকটিরও পরিণতি কি বিয়েলসার মতো হতে যাচ্ছে!
বিয়েলসারে সঙ্গে বাতিস্তার আরেকটি মিল হল দু জনই একটি করে অলিম্পিক সোনা জিতে এনে দিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। এবং অত্যন্ত শোকের ব্যাপার এই যে, বাতিস্তা ওই সোনার পদকটিকেই দেখিয়ে চলেছেন; আর কিচ্ছুটি তার মধ্যে দেখার মতো আছে বলে মনে হল না।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার এই সতীর্থ খেলোয়াড় হিসেবে আর্জেন্টিনার সেরা শ দুয়েকের তালিকাতেও থাকার কথা নয়। যুব দল নিয়ে কিছু সাফল্য ও ২০০৮ অলিম্পিক সোনার জোরে হয়ে গেলেন ম্যারাডোনার উত্তরসুরী।
ম্যারাডোনা চলে যাচ্ছেন যাচ্ছেন অবস্থায় স্পেনকে ৪-০ গোলে হারিয়ে বাতিস্তা একটা ধারণা তৈরি করলেন যে, তিনি আসলে অনেক বড় কোচ। কোচ হিসেবে বাতিস্তাকে ‘অনেক বড়’ বলা তো দূরে থাক, সাধারণ বলাই এখন কষ্ট।
যে লোকটি তার দলের সেরা খেলোয়াড় কারা এটা চেনে না, তাকে কোচ ভাবাটা কঠিন। আপনি হিগুয়েইন, ডি মারিয়া, আগুয়েরো, মিলিতো, পাস্তোরে, গ্যাগোকে বাইরে রেখে লাভেজ্জি, বানেগা, বেুড়িয়ে যাওয়া ক্যাম্বিয়াসোদের মাঠে নামাবেন; এটা ফাজলামো ছাড়া আর কিচ্ছু না।
প্রতিভা বস্তুটা আজকের দিনে আর গাছে ধরে না। এখন আর সান্তোসে পৃথিবীর অজ্ঞাতে একজন পেলের বেড়ে ওঠার সুযোগ নেই। এখন সান্তোসের নেইমার, গানসোদেরও সবাই চেনে। লাভেজ্জিরা যদি এমন কিছু খেলোয়াড়রই হতেন, রিয়াল মাদ্রিদে না হোক ম্যানসিচি, সাম্পদোরিয়ায় অন্তত দেখা যেত এসব ‘কূলমার্তন্ড’কে।
তা নয়। বাতিস্তা ভাবলেন উনি জহেরতের খনি আবিস্কার করে ফেলেছেন!
খেলোয়াড় নির্বাচনও এই লোকের প্রধান সমস্যা নয়। সে সমস্যা তো ম্যারাডোনারও ছিল। ম্যারাডোনাও জানেত্তিকে বাদে বিশ্বকাপ দল করেছিলেন। গন্ডগোল করে ভেরনকে একাদশে ঠাই দেননি। ম্যারাডোনা-বাতিস্তা কেউই বড় কোচ নয়।
তারপরও ম্যারাডোনা থাকলে অন্তত এই করুন ফুটবল দেখতে হত না। ম্যারাডোনার নামে খাতিরে এবং লোকটির সম্মান রাখতে যাকেই মাঠে নামানো হত, সে একটু জীবন দিয়ে খেলার চেষ্টা করত। যেটা আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে দেখেছিলাম; হারুক-জিতুক দলটি অন্তত অনুপ্রানিত ছিল।
মেসির আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে সম্ভবত একমাত্র ওই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেই সে সতস্ফুর্তভাবে খেলেছে। কারণ, নিশ্চয়ই ম্যারাডোনা। বাতিস্তা মেসিকে নিয়ে এতো চাপাবাজি করলেন, অথচ ছেলেটিকে এই দু ম্যাচ দেখে মনে হল, খেলাটা ভুলে বার্সেলোনায় ফেলে এসেছে; এখন খুজে দেখছে কোথায় পাওয়া যায়।
বাতিস্তা মোটিভেটর হিসেবে কতোবড় সর্বনেশে তার প্রমান কার্লোস তেভেজ। তেভেজের ক্যারিয়ারের ৫৯ ম্যাচের মধ্যে অন্তত ৩০টি আর্ন্তজাতিক ম্যাচই দেখেছি। এই অ্যাপাচিকে আমি কোনোদিন এতোটা নিস্প্রভ দেখিনি আকাশী-নীল জার্সি গায়ে। আর্জেন্টিনা ০-৪ গোলে পিছিয়ে তারপরও তেভেজের প্রানান্ত ফুটবল দেখলে মনে হয়েছে, সে একাই ম্যাচ জেতাবে! আর সেই ছেলেটিকে পর্যন্ত বাতিস্তা ‘ম্যারাডোনার চামচা-টামচা’ বলে একেবারে প্রানহীন করে রেখেছে মাঠে।
সে যাকগে আমার বাড়িও আর্জেন্টিনায় না; প্রভুর ইচ্ছায় আর্জেন্টিনায় বিয়েও করিনি। ফলে সর্বনাশ ওদের হলে আমার কিচ্ছু না। বাতিস্তা ভিলেন হলে ফল সেই টের পাবেন। আমা কী?
আসলেই আমার কিচ্ছু না! বলি বটে, কিচ্ছু না; কিন্তু আকাশী-নীল জার্সি গোয়ে এই হারতে হারতে ড্র করা আর নিস্প্রান চলা ফেরা দেখলে বুকের কোথায় যেন একটু যন্ত্রনা করে ওঠে।
কোথায় ম্যারাডোনা? ফিরে আসুন, রক্ষা করুন আর্জেন্টিনাকে। ফিরে আসুন ডিয়েগো।
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com