মনোবিজ্ঞানের ক্লাস চলছে। শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘একজন লোক চেয়ারে বসে দাঁত কিড়মিড় করছে। পরমুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে চিত্কার করছে। আবার বসে দাঁত কিড়মিড় করছে। আবার উঠে দাঁড়িয়ে চিত্কার করছে। এ রকম দেখলে কী বুঝবে? এই লোকটিকে কী বলা হবে?’
ছাত্রটি অম্লান বদনে উত্তর দিল, ‘অবশ্যই হকি কোচ।’অ্যাই দেখেন, আবার কোচদের নিয়ে তামাশা! নাহ্, কোচদের নিয়ে অনেক হয়েছে। এর চেয়ে বরং হকির কথাই হোক। আমাদের জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে পদত্যাগ করে হকিকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। মাঠে মারামারি আর মাঝেমধ্যে পদত্যাগ করা আমাদের হকির নিয়মিত ব্যাপার হয়ে গেছে। পদত্যাগের খবর শুনলে বুঝবেন, জাতীয় দলের সামনে কোনো খেলা আছে। আর পল্টনে মারামারির শব্দ শুনলে বুঝবেন, হয় সামনে নির্বাচন, নয় হকি মৌসুম শুরু হয়েছে।
গল্প না সত্যি, জানি না। একবার পল্টনের একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় (অনেক দলেরই কার্যালয় আছে এখানে, কেউ গায়ে টেনে নেবেন না) থেকে নাকি একবার পুলিশে টেলিফোন করা হয়েছিল, ‘অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করতে আসছে প্রতিপক্ষ।’ হন্তদন্ত হয়ে পুলিশ এসে দেখল, অস্ত্রশস্ত্র ব্যাপারটা ঠিক আছে। কিন্তু হামলা করতে কেউ আসেনি। একদল ছেলে হকিস্টিক বাগিয়ে মাঠে যাচ্ছিল প্র্যাকটিস করতে।
অবশ্য হকির মারামারিটা শুধু আমাদের দেশের ব্যাপার নয়, দুনিয়াজুড়েই হকিস্টিকটা খেলার উপকরণের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের এবং সমর্থকদের মারামারির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক স্কুলছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ডব্লিউডব্লিউএফ রেসলিং আর হকির মধ্যে পার্থক্য কী? ছেলেটি ভেবে উত্তর দিয়েছিল, ‘হকির মারামারিটা সত্যি সত্যি হয়।’
মাঠে খেলোয়াড়দের যেমন মারামারি হয়, সমর্থকদের মধ্যেও হয়। যারা এগুলো করে তাদের বলে ‘হুলিগান’। ও রকম এক হকি হুলিগানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে। আদালতে বিচারক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করেছিল এই লোক?’
পুলিশ কর্মকর্তা জবাব দিলেন, ‘সে গ্যালারি থেকে পটল ছুড়ে ফেলেছে।’
‘সেটা আর এমন কী অপরাধ হলো!’ বিচারক অবাক।
পুলিশ কর্মকর্তা মাথা নেড়ে বললেন, ‘স্যার, পটল আসলে ওই ম্যাচের রেফারির নাম।’
অভিজ্ঞরা জানেন, এ রকম ‘আলু-পটল’ ছুড়ে মারাটা আসলেই বিচিত্র কিছু নয়। খুব ছোড়াছুড়ি হয়েছে এ রকম একটা ম্যাচের পর দুই বন্ধুতে দেখা। এক বন্ধু খোঁড়াচ্ছে। অন্য বন্ধু জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে, খোঁড়াচ্ছিস কেন?’
‘ও কিছু না। ছোট একটা হকি ইনজুরি।’
‘সেকি! তুই হকি খেলিস নাকি?’
‘না। কাল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম।’
শেষ বেলায় পুরোনো বোতলে একটু নতুন পানীয়। আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। আদালতের সামনে বিবেচ্য, একমাত্র ছেলেটি মা নাকি বাবার কাছে থাকবে। আদালত ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি বাবার সঙ্গে থাকতে চাও?’
‘জি না। বাবা আমাকে মারে।’
‘তাহলে কি মায়ের সঙ্গে থাকতে চাও?’
‘জি না। মা-ও আমাকে মারে।’
‘তাহলে কার সঙ্গে থাকতে চাও।’
‘যেকোনো হকি দলের সঙ্গে।’
‘কেন!’
‘হকি খেলোয়াড়েরা বাইরের কাউকে মারার সময় পায় না। শুধু নিজেরাই মারামারি করে!’
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৩, ২০১০
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com