জেমি সিডন্স যথার্থই বলেছেন, ‘মাশরাফি, একমাত্র মাশরাফি বলেই এটা পেরেছে’
কী পেরেছে মাশরাফি? একজন পেসার, যে কিনা ফিটনেসের ধারেকাছেও নেই, সে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে মান বাচিয়ে ফিরেছে। একজন পেসার, যে কিনা গড়ে ১১৫ কিলোমিটারের ওপর বলই করতে পারল না, সে প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নিল। শেষ ওভারটা বাদ দিলে অস্ট্রেলিয় ব্যাটসম্যানদের ফনা দাবিয়েই রাখল এই ‘হাফ ফিট’ মাশরাফি।
কিভাবে? সিডন্স এক কথায় ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ওর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা আর মেধা দিয়ে।’
দারুণ! আমরা ষোলো আনার চেয়েও বেশি একমত।
যদিও সাধারণ্যে একটা ধারণা আছে, সদা-উচ্ছল মাশরাফির মস্তিস্কে শ্বেত পদার্থ তুলনামূলক কম। এটা একটা ভ্রান্ত মিথ। এই মিথ প্রথমবারের মতো আমার মিথ্যে মনে হয়েছিল আবাহনীর অধিনায়ক মাশরাফিকে দেখে। বাইরে থেকে হইচই করা, পাগলা মাশরাফি মাঠে অন্য এক চেহারায় আবির্ভূত। কি অসাধারণ ফিল্ড প্লেসমেন্ট, অসাধারণ বোলিং চেঞ্জ।
একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে; প্রতিপক্ষ কারা মনে নেই। ও নিজে অসুস্থ। আবাহনীর পেসাররা সব্বাই অসুস্থ বা কোনো সমস্যায় ভুগছে। মাশরাফি মাঠে নামল। পেস বল করার মতো শক্তি ছিল না। অফস্পিন বোলিং করল, তাতেই কেল্লা ফতে।
মাশরাফির ক্রিকেট মস্তিস্ক কতো ক্ষুরধার, সেটা আরও প্রমান পাওয়া গেল তৃতীয় দফা অস্ত্রপচারের পর। দু হাটুতে টানা তিন অস্ত্রপচারে ১৪০ কিলোমিটারের ওপর বল করতে পারা সেই মাশরাফি তখন স্মৃতি হয়ে গেছে। মাশরাফির গড় গতি তখন ১২৮ থেকে ১৩২। মাশরাফি কৌশল বদলালো।
লাইন আর লেন্থের ওপর দারুণ নিয়ন্ত্রন নিয়ে এলো। ছোট ছোট ইনসুইং আবির্ভূত হল, ইয়র্কারের চেষ্টা থাকল না, মাঝে মাঝে কাটার; ঘরোয়া ক্রিকেটে বদলে যাওয়া এই মাশরাফিকে দেখে হঠাৎ চমকে উঠেছিলাম। মাশরাফি, নাকি ওয়াসিম আকরাম!
দুঃখিত অনেক বড় নাম নিয়ে ফেলেছি। তবে পেস বোলিংয়ে এই যে মেধার পরিচয় সে দিল, তাতে পেস বোলিং কিংবদন্তীর কথা মনে না পড়ে পারেই না। তবে ওয়াসিম কাজটা করেছিলেন পৃথিবী শাসন করার জন্য। আর মাশরাফিকে দফায় দফায় এই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে, শরীরের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে।
এবার মাশরাফি যেটা করলেন, তা ক্রিকেট ইতিহাসে লিখে রাখার মতো একটা ব্যাপার হল। মাশরাফিকে যারা জানেন, তারা বোঝেন, এই ছেলেটি শরীর দিয়ে আর ক্রিকেট খেলে না; খেলে মনের জোরে। যে কোনো কারণেই হোক, সেই মনের জোরটা আপাতত ওর নেই। নিজেই বারবার কাকুতি করছিল, এখন না খেলার জন্য।
বোর্ড কর্মকর্তারা, যারা আবার মাশরাফির ক্লাবের ‘মাফিয়াসুলভ কর্মকর্তা’, তারা হুমকি দিয়ে মাঠে নামালেন ছেলেটিকে। এমন অবস্থায় আমি হলে কি করতাম? যা পারি তাই! আমি খারাপ করতাম, দেখে কর্তারা লজ্জা পেতেন; তাতেই আমার সন্তুষ্টি।
কিন্তু এ কারণেই আমি কখনো মাশরাফি হতে পারব না। মাশরাফি যেই না মাঠে নামল, অতীত মুছে গেল। তার সামনে একটাই তথ্য= সে আর্ন্তজাতিক একটি ম্যাচে বল করছে। এখানে যে কোনো মূল্যে ভালো করতে হবে। মাঠেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিল। স্বাভাবিক গতির বল যেহেতু হচ্ছিল না, তাই নিয়মিত ডেলিভারিটাকেই স্লোয়ার বানিয়ে ফেললো।
কী অপূর্ব অভিযোজন! ওয়াটসন, পন্টিংরা মাশরাফির নিয়ান্ত্রিত এই স্লোয়ার বুঝতে ঘাবড়াতে লাগলেন।
ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতে এ এক অসামান্য দৃশ্য: একজন খেলোয়াড় তার সীমাবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এই দৃশ্য ক্রিকেট প্রেমীদের মুগ্ধ করার মতো। তা করেছেও। কিন্তু এই দৃশ্যগুলো দেখে বিলাশবহুল এসি বক্সের মধ্যে বসে আবাহনী, তথা বোর্ড কর্মকর্তারা একবারও কী নিজেদের গালি দেননি? না দেওয়ারই কথা। তাদের কোন কাজটা গালি হজমের উপযুক্ত তাই তো তারা বুঝে উঠতে পারেন না।
অবশ্য শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট সত্যি হলে বলতে হয়, এই বোর্ড সভাপতি বুঝে শুনেও অন্যায় করতে ওস্তাদ মানুষ।
মাশরাফির ব্যাপারে অন্তত ক্রিকেটেও বড় অন্যায় করে ফেললেন আ হ ম মোস্তফা কামাল সাহেব। যে সময়টাতে মাশরাফি নিজেকে ফিট বলে দাবি করছিলেন, তখন তাকে দলে নেওয়া হল না। আর যখন পারিবারিক সংকটে পড়ে ছেলেটি ক্রিকেট থেকে দূরে তখন তাকে হুমকি দিয়ে মাঠে নামালেন!
তর্ক করতে পারেন, ফিট দাবি করলেও মাশরাফি কি আসলে ফিট ছিলেন? আমি এ ব্যাপারে কোনো তত্ত্ব বা তথ্যে বিশ্বাসী না। মাশরাফিকে এতোগুলো বছর ধরে দেখছি। ও যদি বলে, ও ফিট; এটা মেনে নিতে হবে। ওর ফিটনেস ওর চেয়ে ভালো দুনিয়ার কোনো চিকিৎসক বোঝে না। ও নিজেকে ফিট মনে করলে ম্যাচে সে চমকাবেই।
যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন বলি, ছেলেটাকে মুক্তি দিন। যদি সে খেলতে চায় ভালো। না চাইলে ওকে একটু রেহাই দিন। জোর করে, হুমকি দিয়ে ওকে মাঠে নামানো যাবে সত্যি; তাতে মানও বাচবে, কিন্তু একটা ছেলের জীবন নষ্ট হবে।
বহু মানুষকে সর্বশান্ত করেছেন শেয়ার বাজারে, এবার এই ছেলেটাকে অন্তত রেহাই দিন।
কিভাবে? সিডন্স এক কথায় ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ওর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা আর মেধা দিয়ে।’
দারুণ! আমরা ষোলো আনার চেয়েও বেশি একমত।
যদিও সাধারণ্যে একটা ধারণা আছে, সদা-উচ্ছল মাশরাফির মস্তিস্কে শ্বেত পদার্থ তুলনামূলক কম। এটা একটা ভ্রান্ত মিথ। এই মিথ প্রথমবারের মতো আমার মিথ্যে মনে হয়েছিল আবাহনীর অধিনায়ক মাশরাফিকে দেখে। বাইরে থেকে হইচই করা, পাগলা মাশরাফি মাঠে অন্য এক চেহারায় আবির্ভূত। কি অসাধারণ ফিল্ড প্লেসমেন্ট, অসাধারণ বোলিং চেঞ্জ।
একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে; প্রতিপক্ষ কারা মনে নেই। ও নিজে অসুস্থ। আবাহনীর পেসাররা সব্বাই অসুস্থ বা কোনো সমস্যায় ভুগছে। মাশরাফি মাঠে নামল। পেস বল করার মতো শক্তি ছিল না। অফস্পিন বোলিং করল, তাতেই কেল্লা ফতে।
মাশরাফির ক্রিকেট মস্তিস্ক কতো ক্ষুরধার, সেটা আরও প্রমান পাওয়া গেল তৃতীয় দফা অস্ত্রপচারের পর। দু হাটুতে টানা তিন অস্ত্রপচারে ১৪০ কিলোমিটারের ওপর বল করতে পারা সেই মাশরাফি তখন স্মৃতি হয়ে গেছে। মাশরাফির গড় গতি তখন ১২৮ থেকে ১৩২। মাশরাফি কৌশল বদলালো।
লাইন আর লেন্থের ওপর দারুণ নিয়ন্ত্রন নিয়ে এলো। ছোট ছোট ইনসুইং আবির্ভূত হল, ইয়র্কারের চেষ্টা থাকল না, মাঝে মাঝে কাটার; ঘরোয়া ক্রিকেটে বদলে যাওয়া এই মাশরাফিকে দেখে হঠাৎ চমকে উঠেছিলাম। মাশরাফি, নাকি ওয়াসিম আকরাম!
দুঃখিত অনেক বড় নাম নিয়ে ফেলেছি। তবে পেস বোলিংয়ে এই যে মেধার পরিচয় সে দিল, তাতে পেস বোলিং কিংবদন্তীর কথা মনে না পড়ে পারেই না। তবে ওয়াসিম কাজটা করেছিলেন পৃথিবী শাসন করার জন্য। আর মাশরাফিকে দফায় দফায় এই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে, শরীরের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে।
এবার মাশরাফি যেটা করলেন, তা ক্রিকেট ইতিহাসে লিখে রাখার মতো একটা ব্যাপার হল। মাশরাফিকে যারা জানেন, তারা বোঝেন, এই ছেলেটি শরীর দিয়ে আর ক্রিকেট খেলে না; খেলে মনের জোরে। যে কোনো কারণেই হোক, সেই মনের জোরটা আপাতত ওর নেই। নিজেই বারবার কাকুতি করছিল, এখন না খেলার জন্য।
বোর্ড কর্মকর্তারা, যারা আবার মাশরাফির ক্লাবের ‘মাফিয়াসুলভ কর্মকর্তা’, তারা হুমকি দিয়ে মাঠে নামালেন ছেলেটিকে। এমন অবস্থায় আমি হলে কি করতাম? যা পারি তাই! আমি খারাপ করতাম, দেখে কর্তারা লজ্জা পেতেন; তাতেই আমার সন্তুষ্টি।
কিন্তু এ কারণেই আমি কখনো মাশরাফি হতে পারব না। মাশরাফি যেই না মাঠে নামল, অতীত মুছে গেল। তার সামনে একটাই তথ্য= সে আর্ন্তজাতিক একটি ম্যাচে বল করছে। এখানে যে কোনো মূল্যে ভালো করতে হবে। মাঠেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিল। স্বাভাবিক গতির বল যেহেতু হচ্ছিল না, তাই নিয়মিত ডেলিভারিটাকেই স্লোয়ার বানিয়ে ফেললো।
কী অপূর্ব অভিযোজন! ওয়াটসন, পন্টিংরা মাশরাফির নিয়ান্ত্রিত এই স্লোয়ার বুঝতে ঘাবড়াতে লাগলেন।
ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতে এ এক অসামান্য দৃশ্য: একজন খেলোয়াড় তার সীমাবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এই দৃশ্য ক্রিকেট প্রেমীদের মুগ্ধ করার মতো। তা করেছেও। কিন্তু এই দৃশ্যগুলো দেখে বিলাশবহুল এসি বক্সের মধ্যে বসে আবাহনী, তথা বোর্ড কর্মকর্তারা একবারও কী নিজেদের গালি দেননি? না দেওয়ারই কথা। তাদের কোন কাজটা গালি হজমের উপযুক্ত তাই তো তারা বুঝে উঠতে পারেন না।
অবশ্য শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট সত্যি হলে বলতে হয়, এই বোর্ড সভাপতি বুঝে শুনেও অন্যায় করতে ওস্তাদ মানুষ।
মাশরাফির ব্যাপারে অন্তত ক্রিকেটেও বড় অন্যায় করে ফেললেন আ হ ম মোস্তফা কামাল সাহেব। যে সময়টাতে মাশরাফি নিজেকে ফিট বলে দাবি করছিলেন, তখন তাকে দলে নেওয়া হল না। আর যখন পারিবারিক সংকটে পড়ে ছেলেটি ক্রিকেট থেকে দূরে তখন তাকে হুমকি দিয়ে মাঠে নামালেন!
তর্ক করতে পারেন, ফিট দাবি করলেও মাশরাফি কি আসলে ফিট ছিলেন? আমি এ ব্যাপারে কোনো তত্ত্ব বা তথ্যে বিশ্বাসী না। মাশরাফিকে এতোগুলো বছর ধরে দেখছি। ও যদি বলে, ও ফিট; এটা মেনে নিতে হবে। ওর ফিটনেস ওর চেয়ে ভালো দুনিয়ার কোনো চিকিৎসক বোঝে না। ও নিজেকে ফিট মনে করলে ম্যাচে সে চমকাবেই।
যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন বলি, ছেলেটাকে মুক্তি দিন। যদি সে খেলতে চায় ভালো। না চাইলে ওকে একটু রেহাই দিন। জোর করে, হুমকি দিয়ে ওকে মাঠে নামানো যাবে সত্যি; তাতে মানও বাচবে, কিন্তু একটা ছেলের জীবন নষ্ট হবে।
বহু মানুষকে সর্বশান্ত করেছেন শেয়ার বাজারে, এবার এই ছেলেটাকে অন্তত রেহাই দিন।
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com