কতোদিন হল? বছর দুয়েক মনে হয়।
শুরু হয়েছে, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য্য নির্বাচনের এক অফূরন্ত প্রক্রিয়া। শুরুতে শুরুতে আমিও ভোট দিয়েছি নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স সাইটে গিয়ে। এরপর প্রতিটা ব্লগ, পত্রিকা, টেলিভিশনে প্রচারনা; নানা অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিকভাবে যেমন বিষয়টির অবতারনা করেছেন, তাদের মানুষের দেশপ্রেম দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
একসময় আমরা আবিস্কার করেছি, দেশের মন্ত্রীরা এ নিয়ে কথা বলছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন।দেখেছি, দেশে শাহরুখ খান এলে তাকে দিয়ে ভোট দেওয়ানোর প্রতিশ্রুতি, দেখেছি এক মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি: এখন থেকে এসএমএসেও সুন্দরবনকে ভোট দেওয়া যাবে।
আমি মুগ্ধ হয়েছি। মনে হয়েছে, আসলেই দেশের মানুষগুলো দেশ নিয়ে পাগলপারা।
এই মনে হওয়া থেকে পিছিয়ে আসার কোনো কারণ ঘটেনি। মানুষ এখনও সমানে এই ‘ভোট দিন’ প্রচারণা চালু রেখেছে। কিন্তু আমার একটা সন্দেহ গত কিছুদিন ধরে তৈরি হয়েছে: আমার কার পেছনে ছুটছি? এই যে ভোটাভুটি করছি, এতে লাভ-ক্ষতি কার কী হচ্ছে? কে বললো এভাবে সপ্তাশ্চার্য্য নির্বাচন করতে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ধরণের কোনো সপ্তাশ্চার্য্য চিহ্নিত করারই বিপক্ষে। এটা এক ধরণের বৈষম্য ও ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করে। সে যাই হোক, আমার এসব ‘আদ্যিকেলে’ কথা তো দুনিয়া চলবে না। এখন জাতিসংঘ এরকম কোনো উদ্যোগ নিলে, সেটার তো একটা সার্বজনীনতা থাকবেই।
আমরা শুনতে পেলাম, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য্য যারা নির্বাচন করছেন, তারা নাকি ইউনেস্কোর (জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা) অনুমোদনক্রমে কাজটা করছেন। কিন্তু ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট কি বলছে? সেখানে ঢুকে বিস্ময়কর এক তথ্য আবিস্কার করা গেল।
তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্কার বলা হয়েছে, ‘এরকম কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে ইউনেস্কো জড়িত থাকতে পারে না।’
বিজ্ঞপ্তিটি এরকম:
There is no comparison between Mr. Weber’s mediatised campaign and the scientific and educational work resulting from the inscription of sites on UNESCO’s World Heritage List. The list of the 7 New Wonders of the World will be the result of a private undertaking, reflecting only the opinions of those with access to the Internet and not the entire world. This initiative cannot, in any significant and sustainable manner, contribute to the preservation of sites elected by this public.
June 20, 2007
The United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization (UNESCO)
press release
মানে, সোজা কথা তারা এই নির্বাচনের দায় নিচ্ছে না। তার মানে এই যে প্রক্রিয়াটা, পুরোটাই একটি সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ! তাদের লাভ কী? প্রথম লাভ তো, সোজা কথা, প্রচারনা। দ্বিতীয়ত আরও কিছু অর্থনৈতিক লাভালাভের অভিযোগ বিভিন্ন পক্ষ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া মোবাইল, ফোন, ওয়েবসসাইট কোম্পানিগুলোর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার প্রাপ্তির ব্যাপারও জড়িত এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
এখন আমাদের কতোগুলো সোজা প্রশ্ন। এরকম একটি অস্বীকৃত প্রকল্পের জন্য এভাবে একটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উঠেপড়ে লাগাটা কি মানানসই ব্যাপার? এভাবে ভোটাভুটি করে কি আদৌ কোনো সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব? কোনটি সপ্তাশ্চার্য, কোনটি নয়; সেটা নির্বাচন করতে পারেন বিশেষজ্ঞরা; আম জনতার, বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভোট এখানে কেন মূল ভূমিকা রাখছে?
আমার ফেসবুক বন্ধু জোবায়ের তনিম ভালো বলছিলেন, ‘একটা ব্যাপার চিন্তা করেন , যে দেশে জনসংখ্যা সব চেয়ে বেশি , তারা একটু চেষ্টা করলেই তাদের নদী নালা, খাল বিল ইত্যাদি সবকিছুকেই সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচিত করতে পারবে ‘
ঘটনা সত্যি।
এরপরও কথা থাকে। একটা কথা হল, প্লাটফর্ম যাই হোক, আমরা শুধু ভোট দিয়ে দেশের দুইটি জায়গাকে এভাবে পরিচিত করতে পারলে লাভ তো আমাদেরই। আমাদের পর্যটন শিল্প তাতে বিকশিত হবে, বিদেশী মূদ্রা আসবে।
আসলেই তাই? পর্যটকরা কি এসব তালিকা দেখে কোথাও বেড়াতে যান? যেসব পর্যটক বেড়াতে বের হন, তারা কেউ সুন্দরবন বা কক্সবাজারের নাম জানেন না বলে আসেননি; এমন ঘটনা দেখলেও বিশ্বাস করার কথা নয়।
আমরা পর্যটক আকর্ষন করতে পারি না, আমাদের নোংরা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ-আবাসন সমস্যার কারণে। আরও অনেক সমস্যার কারণে। ফলে দুনিয়ার প্রত্যেককে সুন্দরবনের নাম মুখস্থ করিয়ে দিলেও এই সেক্টরগুলোতে কাজ না করলে পর্যটকও আসবে না, এক নম্বরও হওয়া হবে না।
(এই লেখা কাউকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নয়। যারা সুন্দরবনের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন, তাদের জন্য শুভকামনা। তাদের পরিশ্রমকে স্যালুট করি)
একসময় আমরা আবিস্কার করেছি, দেশের মন্ত্রীরা এ নিয়ে কথা বলছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন।দেখেছি, দেশে শাহরুখ খান এলে তাকে দিয়ে ভোট দেওয়ানোর প্রতিশ্রুতি, দেখেছি এক মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি: এখন থেকে এসএমএসেও সুন্দরবনকে ভোট দেওয়া যাবে।
আমি মুগ্ধ হয়েছি। মনে হয়েছে, আসলেই দেশের মানুষগুলো দেশ নিয়ে পাগলপারা।
এই মনে হওয়া থেকে পিছিয়ে আসার কোনো কারণ ঘটেনি। মানুষ এখনও সমানে এই ‘ভোট দিন’ প্রচারণা চালু রেখেছে। কিন্তু আমার একটা সন্দেহ গত কিছুদিন ধরে তৈরি হয়েছে: আমার কার পেছনে ছুটছি? এই যে ভোটাভুটি করছি, এতে লাভ-ক্ষতি কার কী হচ্ছে? কে বললো এভাবে সপ্তাশ্চার্য্য নির্বাচন করতে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ধরণের কোনো সপ্তাশ্চার্য্য চিহ্নিত করারই বিপক্ষে। এটা এক ধরণের বৈষম্য ও ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করে। সে যাই হোক, আমার এসব ‘আদ্যিকেলে’ কথা তো দুনিয়া চলবে না। এখন জাতিসংঘ এরকম কোনো উদ্যোগ নিলে, সেটার তো একটা সার্বজনীনতা থাকবেই।
আমরা শুনতে পেলাম, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য্য যারা নির্বাচন করছেন, তারা নাকি ইউনেস্কোর (জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা) অনুমোদনক্রমে কাজটা করছেন। কিন্তু ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট কি বলছে? সেখানে ঢুকে বিস্ময়কর এক তথ্য আবিস্কার করা গেল।
তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্কার বলা হয়েছে, ‘এরকম কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে ইউনেস্কো জড়িত থাকতে পারে না।’
বিজ্ঞপ্তিটি এরকম:
There is no comparison between Mr. Weber’s mediatised campaign and the scientific and educational work resulting from the inscription of sites on UNESCO’s World Heritage List. The list of the 7 New Wonders of the World will be the result of a private undertaking, reflecting only the opinions of those with access to the Internet and not the entire world. This initiative cannot, in any significant and sustainable manner, contribute to the preservation of sites elected by this public.
June 20, 2007
The United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization (UNESCO)
press release
মানে, সোজা কথা তারা এই নির্বাচনের দায় নিচ্ছে না। তার মানে এই যে প্রক্রিয়াটা, পুরোটাই একটি সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ! তাদের লাভ কী? প্রথম লাভ তো, সোজা কথা, প্রচারনা। দ্বিতীয়ত আরও কিছু অর্থনৈতিক লাভালাভের অভিযোগ বিভিন্ন পক্ষ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া মোবাইল, ফোন, ওয়েবসসাইট কোম্পানিগুলোর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার প্রাপ্তির ব্যাপারও জড়িত এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
এখন আমাদের কতোগুলো সোজা প্রশ্ন। এরকম একটি অস্বীকৃত প্রকল্পের জন্য এভাবে একটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উঠেপড়ে লাগাটা কি মানানসই ব্যাপার? এভাবে ভোটাভুটি করে কি আদৌ কোনো সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব? কোনটি সপ্তাশ্চার্য, কোনটি নয়; সেটা নির্বাচন করতে পারেন বিশেষজ্ঞরা; আম জনতার, বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভোট এখানে কেন মূল ভূমিকা রাখছে?
আমার ফেসবুক বন্ধু জোবায়ের তনিম ভালো বলছিলেন, ‘একটা ব্যাপার চিন্তা করেন , যে দেশে জনসংখ্যা সব চেয়ে বেশি , তারা একটু চেষ্টা করলেই তাদের নদী নালা, খাল বিল ইত্যাদি সবকিছুকেই সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচিত করতে পারবে ‘
ঘটনা সত্যি।
এরপরও কথা থাকে। একটা কথা হল, প্লাটফর্ম যাই হোক, আমরা শুধু ভোট দিয়ে দেশের দুইটি জায়গাকে এভাবে পরিচিত করতে পারলে লাভ তো আমাদেরই। আমাদের পর্যটন শিল্প তাতে বিকশিত হবে, বিদেশী মূদ্রা আসবে।
আসলেই তাই? পর্যটকরা কি এসব তালিকা দেখে কোথাও বেড়াতে যান? যেসব পর্যটক বেড়াতে বের হন, তারা কেউ সুন্দরবন বা কক্সবাজারের নাম জানেন না বলে আসেননি; এমন ঘটনা দেখলেও বিশ্বাস করার কথা নয়।
আমরা পর্যটক আকর্ষন করতে পারি না, আমাদের নোংরা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ-আবাসন সমস্যার কারণে। আরও অনেক সমস্যার কারণে। ফলে দুনিয়ার প্রত্যেককে সুন্দরবনের নাম মুখস্থ করিয়ে দিলেও এই সেক্টরগুলোতে কাজ না করলে পর্যটকও আসবে না, এক নম্বরও হওয়া হবে না।
(এই লেখা কাউকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নয়। যারা সুন্দরবনের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন, তাদের জন্য শুভকামনা। তাদের পরিশ্রমকে স্যালুট করি)
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com