বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১১

ওঠানামার খেলা


পটলডাঙার সেই বিখ্যাত টেনিদার পাল্লায় পড়ে একবার ক্রিকেট খেলে ফেলেছিল প্যালারাম বাড়ুজ্জে। মাঠে দুই আম্পায়ারকেও ফিল্ডিং দলের লোক ধরে নিয়েছিল প্যালারাম। তার হিসাবে ফিল্ডিং দলের খেলোয়াড় দাঁড়াল ১৩ জন মাত্র!

যদিও জ্ঞানী লোকরা বলেন, দলে খেলোয়াড় থাকবে ১১ জন, কিন্তু জ্ঞানী লোকদের কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। শুধু প্যালারাম নয়, এক দলের ১১ জনের বেশি খেলোয়াড় মাঠে দেখার অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে।
১৯৮৬ সালে ভারত-ইংল্যান্ড লিডস টেস্টের ঘটনা। তৃতীয় দিনের খেলা চলছিল। সাহেবদের দেশ আবহাওয়ার গুণে বা বিলেতি খাওয়ার কারণে, ভারতের খেলোয়াড়দের মাঠের চেয়ে ড্রেসিং রুমই বেশি টানছিল। খেলোয়াড়েরা বারবার মাঠ ছেড়ে উঠছিলেন (মাঠ ছেড়ে গিয়ে কী করছিলেন সে আলোচনা না হয় না- করি) মাঠ তো আর ফাঁকা থাকতে পারে না। একজন খেলোয়াড় মাঠ ছাড়ছেন, তার বদলে বদলি ফিল্ডার ঢুকছেন। - চলছিল। একবার উঠছে, নামছে। আবার নামছে, সে উঠছে। রকম করতে করতে কে উঠল আর কে নামল, সে হিসাব আম্পায়াররাও গুলিয়ে ফেললেন। ফলে একসময় আবিষ্কৃত হলো, মাঠে ভারতীয় ফিল্ডার (বোলার-উইকেটরক্ষক মিলে) ১২ জন! মানে আসল খেলোয়াড় মাঠে ফিরলেও বদলি ফিল্ডার উঠে যেতে ভুলে গিয়েছিল!
টেস্ট ক্রিকেটে এমন আজব ঘটনা আর নেই। তবে কাউন্টি ক্রিকেটে রকম ওঠানামা গুলিয়ে ফেলার নজির আরও মেলে। ওঠানামা গুলিয়ে ফেলার সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিটা বোধহয় ১৯৩৫ সালে ইয়র্কশায়ার আর এসেক্সের একটা ম্যাচে। মানুষ কথায় বলে, ব্যাটসম্যানরা উইকেটে যাওয়া-আসার মিছিল লাগিয়েছেন। সেদিন তা- হয়েছিল এসেক্সের। ব্যাটসম্যান যে গতিতে যাচ্ছে, এর দ্বিগুণ গতিতে আউট হয়ে ফিরে আসছে। কে আউট হলো আর কে এল, তা খেয়াল রাখার উপায় নেই!
এক ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন ক্যাচ তুলে দিয়ে। তাঁর সঙ্গী নিকোলস এরই মধ্যে দৌড়ে স্ট্রাইকিং প্রান্তে চলে এসেছেন। নিশ্চিন্তে বোলার পরের বলটা করে ফেললেন। দর্শকদেরঅভিভূতকরে দিয়ে নিকোলস ছয় মেরে দিলেন। কিন্তু বল বাউন্ডারির বাইরে যেতেই আবিষ্কৃত হলো, নিকোলসের তখন সঙ্গী বলে কেউ নেই। মানে অন্য প্রান্তের নতুন ব্যাটসম্যান তখনো মাঠে এসে পৌঁছাননি। কেলেঙ্কারির এখানেই শেষ নয়। নতুন ব্যাটসম্যান আসার পর সত্যিকারের যে বলটা হলো, সেটাতেই আউট নিকোলসও!
যা- হোক, মাঠে এগারো না বারোজন খেলোয়াড় থাকবেন, আন্তর্জাতিক সেই অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অলিফ্যান্ট-কালাম নামে সেই ভদ্রলোকের ঘটনা বলে শেষ করা যাক। অলিফ্যান্ট-কালাম মোটেও বিখ্যাত কেউ নন। তবে হলে হতেও পারতেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেকের কথা ছিল সেদিন।
কেন্টের বিপক্ষে ম্যাচের আগেএকাদশেনিজের নাম দেখে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে অভিষেকের আনন্দে টগবগ করছিলেন। মাঠে নেমেও ছিলেন। দুই দল সারি বেঁধে মুখোমুখি দাঁড়ানোর পরই ব্যাপারটা আবিষ্কৃত হলো। অক্সফোর্ড আসলেএকাদশনয়, মাঠে নামিয়ে ফেলেছে বারো জনের দল! কেলেঙ্কারি চাপা দিতে একজনকে তাড়াতাড়ি মাঠ থেকে তুলে দেওয়া হলো। সেই জনটা কে? ওই যে অলিফ্যান্ট-কালাম। বেচারা! আর কোনো দিন সেই অভিষেকের সুযোগ হয়নি তাঁর।
প্যালারাম বাড়ুজ্জের কথা মেনে নিলেই হতো।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্রঃ প্রথম আলো, এপ্রিল ০৬, ২০০৯

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites