সক্কাল বেলায় একটা খবর পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল: জেমি সিডন্স সেন্টার ফর এক্সেলেন্সে (অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমিতে) চাকরির চেষ্টা করছেন। মানে, আবার সেই ল্যাবরটরিতে ঢুকবেন ভদ্রলোক। মানে, জেমি সিডন্সের আর ‘বড় কোচ’ হওয়া হল না!!
ইচ্ছে করেই ‘বড় কোচ’ শব্দ দুটো লিখলাম। আমি কখনোই মনে করি না, জেমি সিডন্স একজন বড় কোচ। আরও ভালো করে বললে বলা যায়, জেমি সিডন্স কখনো একটা জাতীয় দল সামলানোর মতো কোচ ছিলেন না।
আপাতত মনে হতে পারে, ভদ্রলোকের বিদায় নিশ্চিত জেনে এই মন্তব্য করছি। কিংবা বিশ্বকাপে সাময়িক-বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বোধহয় এইসব বাক্য রচনা।
বিশ্বাস করা, না করার ‘দায়’ আপনার; আমি বলতে পারি, প্রথম দিন থেকেই জেমিকে আমার কখনো ‘হেড কোচ’ পদের উপযুক্ত মনে হয়নি। সেই ২০০৭ সালের শেষ দিকে ঢাকায় নেমেই জেমি সিডন্স মাশরাফিকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন: তাঁর দলে বিশেষ কারো স্থান নেই। সে মাশরাফি হোক আর যেই হোক।
অত্যন্ত খাটি কথা। কোনো কোচের দলে ‘বিশেষ’ বলে কেউ থাকতে পারেন না (অবশ্য দুঃখের বিষয়, পরে আমরা দেখেছি, জেমির দলে কয়েক জন ‘বিশেষ’ খেলোয়াড় তৈরি হয়েছেন)। কিন্তু একজন জাতীয় দলের কোচ সংশ্লিষ্ট দেশে পৌছেই সে দেশের অন্যতম বড় তারকাকে কি এভাবে আক্রমন করতে পারেন! তখনই সন্দেহ হয়েছিল, ভদ্রলোক কি একটা জাতীয় দল সামলাতে পারবেন? কালক্রমে সেই সন্দেহ আমার সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে।
আইসিএল কান্ডের ক দিন আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে জেমি সিডন্স আশরাফুলকে নিয়ে অত্যন্ত সত্যি কিছু কথা বললেন। বললেন, আশরাফুল একটা প্রতিকভার অপচয় মাত্র। এই ব্যাটিং গড় নিয়ে একটা দলের মূল ভরসা হওয়া যায় না। খুব সত্যি কথা, খুব হক কথা।
কিন্তু আবার সেই প্রশ্ন। দলে উপস্থিত খেলোয়াড়কে নিয়ে এই কথা একজন প্রধান কোচ কি বলতে পারেন? এটা কি তার চেয়ার অনুমোদন করে! চেয়ার যেমন ক্ষমতা দেয়, তেমনই কিছু বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। সব চেয়ারে বসে সব সত্যি কথা বলা যায় না। সেটা ছেলেমানুষী, অপেশাদারীত্ব অথবা চেয়ারে বসার অভিজ্ঞতার অভাব।
সর্বশেষ জেমির আরেকটা কথা শুনে আতকে উঠলাম। টেকনিক্যাল কমিটির সভায়, তিনি স্বীকার করেছেন, ম্যাচ চলাকালে তিনি খেলোয়াড়দের পরামর্শ দেন না। এমনকি ৫৮ বা ৭৮ কেলেঙ্কারির সময়ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় কিছু বলেননি। কেন? তার যুক্তি, যা শেখানোর তো আগে শিখিয়েছি। এখন তো পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় কি শিক্ষক পরামর্শ দেয়?
এখানেই আসল রোগ। জেমি তার ভূমিকাটাই বুঝতে ভুল করেছেন। মিস্টার জেমি সিডন্স, হেড কোচের ভূমিকা শিক্ষকের নয়; সামরিক উপদেষ্টার। ক্রিকেট ম্যাচ পরীক্ষা নয়, যুদ্ধ! যুদ্ধ চলাকালে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন উপদেষ্ট-অধিনায়ক সবাইকে কথা বলে, নতুন কিছু আবিস্কার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
আসলে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে হেড কোচের এই ভূমিকাটা জেমি কখনো দেখেনইনি। জেমির ক্যারিয়ার ফিরে দেখতে গিয়ে মনে হয়, লোকটার আসলে অভিজ্ঞতারই অভাব। বাংলাদেশে আসার আগে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা, রনকৌশল করা বা পরামর্শ দেওয়ার অভিজ্ঞতাই ছিল না তার।
শেন ওয়ার্ন কথিত ‘সর্বকালের সেরা-৫০’ ক্রিকেটারের একজন জেমি সিডন্স সারা জীবনে জাতীয় দলের হয়ে একটিমাত্র ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, টেস্ট দলে ডাকই পাননি। সারাজীবন কেটেছে তার অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটে। সে ক্রিকেটের মান যতো ভালোই হোক, তা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটকে ধারণ করতে পারে না।
আয়ারল্যান্ড-কেনিয়া ম্যাচেও যে একটা আর্ন্তজাতিক যুদ্ধ যুদ্ধ চেহারা, জার্সির উত্তাপ, দর্শকের চাপ থাকে তা শেফিল্ডের সবচেয়ে ভালো ম্যাচটিতেও থাকবে না। ফলে সারাজীবন ওখানে খেলে আর্ন্তজাতিক ম্যাচে কি হয়, এটা বোঝা যাবে না। এটা বোঝা যাবে আর্ন্তজাতিক ম্যাচের ২২ গজে গিয়ে দাড়ালে।
জেমির জীবনের পরের অংশটুকু কেটেছে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমিতে এবং অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে। অ্যাকাডেমিতে রনকৌশল শেখা বা বোঝার সুযোগই নেই। আর তর্কসাপেক্ষে ধরে নেওয়া যায়, জন বুকানন-স্টিভ ওয়াহদের দলে ব্যাটিং কোচের রনকৌশল নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ ছিল না।
ফরে বাংলাদেশে এসেছিলেনই একটা অপরিপক্কতা নিয়ে। আরও দূর্ভাগ্য আইসএল কান্ডে জেমির হাতে পড়লও একটি অপরিপক্ক দর। দুয়ে মিলে চরম পক্কতার অভাব দেখালেন।
তাহলে সারমর্ম কী? চার বছরে আমরা জেমির কাছ থেকে কিছুই পাইনি! অবশ্যই পেয়েছি। এই চার বছরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টেকনিকালি অনেক উন্নতি করেছেন। উন্নতির ছাপটা আমরা নানাভাবে দেখতে পেয়েছি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেটা অনুদিত হচ্ছে না।
সে জন্যই এখন সময়, একজন অভিজ্ঞ কোচের। আমাদের পারফরম্যান্সকে কিভাবে মাঠে তুলে ধরা যাবে, প্রতিপক্ষ দেখে কিভাবে নিত্য-নতুন রনকৌশল ঠিক করা যাবে; এসব জানা-বোঝা একজন মানুষ দরকার।
কোচ কে হবেন কে জানে। বোর্ডের এক পক্ষ চায় দেশী কোচ, সেটি মঙ্গলজনক বলে মনে হয় না। আবার সভাপতিসহ আরেকপক্ষ বিদেশী কোচের পক্ষে। এদিকে সভাপতির নিজের চেয়ারের নিচেই মার্বেল বসেছে; যে কোনো সময় পতন হতে পারে।
তবে যাই হোক, আমার একটাই চাওয়া আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের ছোয়া আছে, এমন একজন কোচ অন্তত আনা হোক।
***
এই লেখার একটি লাইনও ব্যক্তি জেমি সিডন্সকে খাটো করার জন্য নয়। আমরা খুব ভালো করে জানি, তিনি কতো বড় মাপের ব্যাটসম্যান। দুনিয়া একবাক্যে মানে, তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং কোচ। খুব ভালো হত, এই লোকটিকে ব্যাটিং কোচের ভূমিকায় রেখে দিতে পারলে।
কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। মানুষ তো ‘ইগো’ বস্তুটা নিয়েই চলে।
তাই জেমি সিডন্সের জন্য শুভ কামনা। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকবেন।
আপাতত মনে হতে পারে, ভদ্রলোকের বিদায় নিশ্চিত জেনে এই মন্তব্য করছি। কিংবা বিশ্বকাপে সাময়িক-বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বোধহয় এইসব বাক্য রচনা।
বিশ্বাস করা, না করার ‘দায়’ আপনার; আমি বলতে পারি, প্রথম দিন থেকেই জেমিকে আমার কখনো ‘হেড কোচ’ পদের উপযুক্ত মনে হয়নি। সেই ২০০৭ সালের শেষ দিকে ঢাকায় নেমেই জেমি সিডন্স মাশরাফিকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন: তাঁর দলে বিশেষ কারো স্থান নেই। সে মাশরাফি হোক আর যেই হোক।
অত্যন্ত খাটি কথা। কোনো কোচের দলে ‘বিশেষ’ বলে কেউ থাকতে পারেন না (অবশ্য দুঃখের বিষয়, পরে আমরা দেখেছি, জেমির দলে কয়েক জন ‘বিশেষ’ খেলোয়াড় তৈরি হয়েছেন)। কিন্তু একজন জাতীয় দলের কোচ সংশ্লিষ্ট দেশে পৌছেই সে দেশের অন্যতম বড় তারকাকে কি এভাবে আক্রমন করতে পারেন! তখনই সন্দেহ হয়েছিল, ভদ্রলোক কি একটা জাতীয় দল সামলাতে পারবেন? কালক্রমে সেই সন্দেহ আমার সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে।
আইসিএল কান্ডের ক দিন আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে জেমি সিডন্স আশরাফুলকে নিয়ে অত্যন্ত সত্যি কিছু কথা বললেন। বললেন, আশরাফুল একটা প্রতিকভার অপচয় মাত্র। এই ব্যাটিং গড় নিয়ে একটা দলের মূল ভরসা হওয়া যায় না। খুব সত্যি কথা, খুব হক কথা।
কিন্তু আবার সেই প্রশ্ন। দলে উপস্থিত খেলোয়াড়কে নিয়ে এই কথা একজন প্রধান কোচ কি বলতে পারেন? এটা কি তার চেয়ার অনুমোদন করে! চেয়ার যেমন ক্ষমতা দেয়, তেমনই কিছু বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। সব চেয়ারে বসে সব সত্যি কথা বলা যায় না। সেটা ছেলেমানুষী, অপেশাদারীত্ব অথবা চেয়ারে বসার অভিজ্ঞতার অভাব।
সর্বশেষ জেমির আরেকটা কথা শুনে আতকে উঠলাম। টেকনিক্যাল কমিটির সভায়, তিনি স্বীকার করেছেন, ম্যাচ চলাকালে তিনি খেলোয়াড়দের পরামর্শ দেন না। এমনকি ৫৮ বা ৭৮ কেলেঙ্কারির সময়ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় কিছু বলেননি। কেন? তার যুক্তি, যা শেখানোর তো আগে শিখিয়েছি। এখন তো পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় কি শিক্ষক পরামর্শ দেয়?
এখানেই আসল রোগ। জেমি তার ভূমিকাটাই বুঝতে ভুল করেছেন। মিস্টার জেমি সিডন্স, হেড কোচের ভূমিকা শিক্ষকের নয়; সামরিক উপদেষ্টার। ক্রিকেট ম্যাচ পরীক্ষা নয়, যুদ্ধ! যুদ্ধ চলাকালে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন উপদেষ্ট-অধিনায়ক সবাইকে কথা বলে, নতুন কিছু আবিস্কার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
আসলে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে হেড কোচের এই ভূমিকাটা জেমি কখনো দেখেনইনি। জেমির ক্যারিয়ার ফিরে দেখতে গিয়ে মনে হয়, লোকটার আসলে অভিজ্ঞতারই অভাব। বাংলাদেশে আসার আগে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা, রনকৌশল করা বা পরামর্শ দেওয়ার অভিজ্ঞতাই ছিল না তার।
শেন ওয়ার্ন কথিত ‘সর্বকালের সেরা-৫০’ ক্রিকেটারের একজন জেমি সিডন্স সারা জীবনে জাতীয় দলের হয়ে একটিমাত্র ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, টেস্ট দলে ডাকই পাননি। সারাজীবন কেটেছে তার অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটে। সে ক্রিকেটের মান যতো ভালোই হোক, তা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটকে ধারণ করতে পারে না।
আয়ারল্যান্ড-কেনিয়া ম্যাচেও যে একটা আর্ন্তজাতিক যুদ্ধ যুদ্ধ চেহারা, জার্সির উত্তাপ, দর্শকের চাপ থাকে তা শেফিল্ডের সবচেয়ে ভালো ম্যাচটিতেও থাকবে না। ফলে সারাজীবন ওখানে খেলে আর্ন্তজাতিক ম্যাচে কি হয়, এটা বোঝা যাবে না। এটা বোঝা যাবে আর্ন্তজাতিক ম্যাচের ২২ গজে গিয়ে দাড়ালে।
জেমির জীবনের পরের অংশটুকু কেটেছে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমিতে এবং অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে। অ্যাকাডেমিতে রনকৌশল শেখা বা বোঝার সুযোগই নেই। আর তর্কসাপেক্ষে ধরে নেওয়া যায়, জন বুকানন-স্টিভ ওয়াহদের দলে ব্যাটিং কোচের রনকৌশল নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ ছিল না।
ফরে বাংলাদেশে এসেছিলেনই একটা অপরিপক্কতা নিয়ে। আরও দূর্ভাগ্য আইসএল কান্ডে জেমির হাতে পড়লও একটি অপরিপক্ক দর। দুয়ে মিলে চরম পক্কতার অভাব দেখালেন।
তাহলে সারমর্ম কী? চার বছরে আমরা জেমির কাছ থেকে কিছুই পাইনি! অবশ্যই পেয়েছি। এই চার বছরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টেকনিকালি অনেক উন্নতি করেছেন। উন্নতির ছাপটা আমরা নানাভাবে দেখতে পেয়েছি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেটা অনুদিত হচ্ছে না।
সে জন্যই এখন সময়, একজন অভিজ্ঞ কোচের। আমাদের পারফরম্যান্সকে কিভাবে মাঠে তুলে ধরা যাবে, প্রতিপক্ষ দেখে কিভাবে নিত্য-নতুন রনকৌশল ঠিক করা যাবে; এসব জানা-বোঝা একজন মানুষ দরকার।
কোচ কে হবেন কে জানে। বোর্ডের এক পক্ষ চায় দেশী কোচ, সেটি মঙ্গলজনক বলে মনে হয় না। আবার সভাপতিসহ আরেকপক্ষ বিদেশী কোচের পক্ষে। এদিকে সভাপতির নিজের চেয়ারের নিচেই মার্বেল বসেছে; যে কোনো সময় পতন হতে পারে।
তবে যাই হোক, আমার একটাই চাওয়া আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের ছোয়া আছে, এমন একজন কোচ অন্তত আনা হোক।
***
এই লেখার একটি লাইনও ব্যক্তি জেমি সিডন্সকে খাটো করার জন্য নয়। আমরা খুব ভালো করে জানি, তিনি কতো বড় মাপের ব্যাটসম্যান। দুনিয়া একবাক্যে মানে, তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং কোচ। খুব ভালো হত, এই লোকটিকে ব্যাটিং কোচের ভূমিকায় রেখে দিতে পারলে।
কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। মানুষ তো ‘ইগো’ বস্তুটা নিয়েই চলে।
তাই জেমি সিডন্সের জন্য শুভ কামনা। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকবেন।