তারিখটা মনে নেই। রেডিসন হোটেলের ঘটনা।
মঞ্চে বসে আছেন তিন বাহিনীর প্রধান। তাদের পাশে একটু সংকুচিত হয়ে বসে আছেন কালো একটি ছেলে; ছেলেটির মুখ থেকে দীপ্তি ঠিকরে বের হচ্ছে। সেনাপ্রধান বক্তৃতা দিতে উঠলেন।
দর্শকসারিতে চেয়ে বললেন, ‘এখানে কি সিদ্দিকের মা আছেন?’
অত্যন্ত সংকুচিত, বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাড়ালেন সিদ্দিকের মা। সেনাপ্রধান হাতটা কপালে ঠেকিয়ে বললেন, ‘এমন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন বলে পুরো দেশের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে স্যালুট করছি।’
আমরা শিউরে উঠলাম।এ অতি দূর্লভ এক দৃশ্য। আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কপালে হাত ঠেকিয়ে স্যালুট করছেন পাচ বছর আগেও খাবারের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা এক নারীকে!
কারণ সেই অতি সাধারণ নারীটি সিদ্দিকুর রহমানের মা!
সিদ্দিকুর রহমান কে, কী; এটা বলার দরকার নিশ্চয়ই আর নেই। মাদারীপুরের এই নিতান্ত দরিদ্র ছেলেটি কিভাবে বলবয় থেকে এশিয়া গলফের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছেন; তাও নতুন করে বলার নিশ্চয়ই আর কিছু নেই?
এক বাক্যে বলতে পারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশের খেলায়ধুলায় সর্বোচ্চ যে কয়টি প্রাপ্তি, তার একটি গলফের সিদ্দিকুর রহমান। সিদ্দিকের নাম দিয়ে এখন এই দেশটাকে চেনেন আর্নে এলস, লি ওয়েস্টউড, মার্টিন কেমারের মতো গলফ কিংবদন্তীরা।
কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এখনও এই মানুষটিকে চেনে না!
সিদ্দিকুরের স্বপ্ন, মেজর টূর্নামেন্ট খেলা।সে সুযোগ নিজেই প্রায় তৈরি করে ফেলেছিল। ইউএস ওপেন (চার মেজরের একটি) বাছাইপর্বে খেলার সরাসরি সুযোগ পেয়েছিল সিদ্দিক। এমনিতে মেজরের বাছাইপর্বের চূড়ান্ত ধাপে যাওয়ার আগে দুটি ধাপ পার হতে হয়।
কিন্তু সিদ্দিক যেহেতু এশিয়ার দুই নম্বর খেলোয়াড়, তাই সে সরাসরি ফাইনাল কোয়ালিফাইং খেলার সুযোগ পেয়েছিল। বাছাইটা খেলতে তাকে যুক্তরাষ্ট্র যেতে হতো।
এখানেই গোলমালটা হল। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ভিসা দিল না সিদ্দিককে। টানা সপ্তাহখানেক ভিসার জন্য ছোটাছুটি করার পর গত কাল নিশ্চিত হল সিদ্দিক ভিসা পাচ্ছে না। যদিও দূতাবাস কৃতপক্ষ নাকি আরও ক দিন অপেক্ষা করতে বলেছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে খেলাটাই পার হয়ে যেত। তাই সিদ্দিক পাসপোর্ট তুলে এনেছে। এখন সে থাইল্যান্ড যাবে, কুইনস কাপে অংশ নিতে।
যখন তার প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মেজরে অংশ নেওয়ার লড়াইয়ে নামার কথা; তখন সে ভাঙা মন নিয়ে লড়বে থাইল্যান্ডের এই টুর্নামেন্টে।
দায় কার? হয়তো বলবেন, ইউএস অ্যাম্বাসি নিশ্চয়ই নিয়ম অনুসরন করতে গিয়ে ভিসাটা দিতে পারেনি। কিন্তু সিদ্দিকের মতো খেলোয়াড়, যার হাতে ইউএস ওপেনের আমন্ত্রনপত্র আছে; তার জন্য কী এমন জটিল নিয়ম থাকতে পারে!!!
যে সব মার্কিনী এই দেশে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে সুন্দরবন, লাউয়াছড়ায় খনিজঅনুসন্ধান করে, আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে ধ্বংসাত্মক গবেষনা করে; তাদের ক্ষেত্রে তো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কোনো নিয়ম বানায় না!!!
বুঝি, এ সবই দরিদ্র দেশে জন্মানোর ফল। এ সবই সিদ্দিকুরের মুসলিম পরিবারে জন্মানোর ফল। গরীবের বৌ থাকাটাই যন্ত্রনা। তায় আবার সুন্দরী হলে আরও যন্ত্রনা।
কিন্তু আমাদের সরকার কি এতোটাই নপুংসক হয়ে গেল যে একজন খেলোয়াড়ের মার্কিন ভিসার নিশ্চয়তাও দিতে পারে না? ওদের সঙ্গে কূটনীতি, সমরনীতি, গ্যাসনীতিতে তো জিততে বলছি না। সে আপনাদের দিয়ে সম্ভবও হবে না।
অন্তত এইটুকু করুন যে, দেশের মান যারা রাখতে পারে তাদের সম্মানটা কিভাবে রাখা যায়। তা না পারলে সোজা বলে দিন, আমাদের পক্ষে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব না। আমরা নিজেদের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মতো পরাধীন বলে ধরে নেব; তাও একটা স্বান্তনা থাকবে।
এই ঢাক ঢাক গুড় গুড় আর সহ্য হয় না। এই অবমাননা আর সহ্য হয় না।
দর্শকসারিতে চেয়ে বললেন, ‘এখানে কি সিদ্দিকের মা আছেন?’
অত্যন্ত সংকুচিত, বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাড়ালেন সিদ্দিকের মা। সেনাপ্রধান হাতটা কপালে ঠেকিয়ে বললেন, ‘এমন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন বলে পুরো দেশের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে স্যালুট করছি।’
আমরা শিউরে উঠলাম।এ অতি দূর্লভ এক দৃশ্য। আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কপালে হাত ঠেকিয়ে স্যালুট করছেন পাচ বছর আগেও খাবারের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা এক নারীকে!
কারণ সেই অতি সাধারণ নারীটি সিদ্দিকুর রহমানের মা!
সিদ্দিকুর রহমান কে, কী; এটা বলার দরকার নিশ্চয়ই আর নেই। মাদারীপুরের এই নিতান্ত দরিদ্র ছেলেটি কিভাবে বলবয় থেকে এশিয়া গলফের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছেন; তাও নতুন করে বলার নিশ্চয়ই আর কিছু নেই?
এক বাক্যে বলতে পারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশের খেলায়ধুলায় সর্বোচ্চ যে কয়টি প্রাপ্তি, তার একটি গলফের সিদ্দিকুর রহমান। সিদ্দিকের নাম দিয়ে এখন এই দেশটাকে চেনেন আর্নে এলস, লি ওয়েস্টউড, মার্টিন কেমারের মতো গলফ কিংবদন্তীরা।
কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এখনও এই মানুষটিকে চেনে না!
সিদ্দিকুরের স্বপ্ন, মেজর টূর্নামেন্ট খেলা।সে সুযোগ নিজেই প্রায় তৈরি করে ফেলেছিল। ইউএস ওপেন (চার মেজরের একটি) বাছাইপর্বে খেলার সরাসরি সুযোগ পেয়েছিল সিদ্দিক। এমনিতে মেজরের বাছাইপর্বের চূড়ান্ত ধাপে যাওয়ার আগে দুটি ধাপ পার হতে হয়।
কিন্তু সিদ্দিক যেহেতু এশিয়ার দুই নম্বর খেলোয়াড়, তাই সে সরাসরি ফাইনাল কোয়ালিফাইং খেলার সুযোগ পেয়েছিল। বাছাইটা খেলতে তাকে যুক্তরাষ্ট্র যেতে হতো।
এখানেই গোলমালটা হল। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ভিসা দিল না সিদ্দিককে। টানা সপ্তাহখানেক ভিসার জন্য ছোটাছুটি করার পর গত কাল নিশ্চিত হল সিদ্দিক ভিসা পাচ্ছে না। যদিও দূতাবাস কৃতপক্ষ নাকি আরও ক দিন অপেক্ষা করতে বলেছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে খেলাটাই পার হয়ে যেত। তাই সিদ্দিক পাসপোর্ট তুলে এনেছে। এখন সে থাইল্যান্ড যাবে, কুইনস কাপে অংশ নিতে।
যখন তার প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মেজরে অংশ নেওয়ার লড়াইয়ে নামার কথা; তখন সে ভাঙা মন নিয়ে লড়বে থাইল্যান্ডের এই টুর্নামেন্টে।
দায় কার? হয়তো বলবেন, ইউএস অ্যাম্বাসি নিশ্চয়ই নিয়ম অনুসরন করতে গিয়ে ভিসাটা দিতে পারেনি। কিন্তু সিদ্দিকের মতো খেলোয়াড়, যার হাতে ইউএস ওপেনের আমন্ত্রনপত্র আছে; তার জন্য কী এমন জটিল নিয়ম থাকতে পারে!!!
যে সব মার্কিনী এই দেশে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে সুন্দরবন, লাউয়াছড়ায় খনিজঅনুসন্ধান করে, আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে ধ্বংসাত্মক গবেষনা করে; তাদের ক্ষেত্রে তো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কোনো নিয়ম বানায় না!!!
বুঝি, এ সবই দরিদ্র দেশে জন্মানোর ফল। এ সবই সিদ্দিকুরের মুসলিম পরিবারে জন্মানোর ফল। গরীবের বৌ থাকাটাই যন্ত্রনা। তায় আবার সুন্দরী হলে আরও যন্ত্রনা।
কিন্তু আমাদের সরকার কি এতোটাই নপুংসক হয়ে গেল যে একজন খেলোয়াড়ের মার্কিন ভিসার নিশ্চয়তাও দিতে পারে না? ওদের সঙ্গে কূটনীতি, সমরনীতি, গ্যাসনীতিতে তো জিততে বলছি না। সে আপনাদের দিয়ে সম্ভবও হবে না।
অন্তত এইটুকু করুন যে, দেশের মান যারা রাখতে পারে তাদের সম্মানটা কিভাবে রাখা যায়। তা না পারলে সোজা বলে দিন, আমাদের পক্ষে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব না। আমরা নিজেদের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মতো পরাধীন বলে ধরে নেব; তাও একটা স্বান্তনা থাকবে।
এই ঢাক ঢাক গুড় গুড় আর সহ্য হয় না। এই অবমাননা আর সহ্য হয় না।
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com