বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১১

আইপিএল মানে কী?


কেউ বলছেইন্ডিয়ান প্রবলেম লিগ’, আবার কেউ বলছেনইন্ডিয়ান পলিউশন লিগ আরও এক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ বলছেইন্ডিয়ান পাওয়ার লিগ’ (বিশ্বাস করুন, এই পাওয়ার মানে শক্তি, শারদ পাওয়ার নন)!

প্রবলেম হোক আরপলিউশন’, জিনিসটা আর ঠিক ইন্ডিয়ান নেই। পুরো ব্যাপারটা তালগোল পাকিয়ে এখনইন্টারন্যাশনালহয়ে গেছে। নামে আইপিএল, মানে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। অথচ সেটা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, খেলছেন শেন ওয়ার্ন থেকে শুরু করে জয়াসুরিয়া, হেইডেনদের মতো অভারতীয়রাও! যেন হনুলুলুতে ভালো বগুড়ার দই তৈরি করার বিজ্ঞাপন।
তালগোল পাকিয়ে ফেলা শুরু করেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ জন বুকানন। এবারের লিগ শুরুর আগেই অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোক ঘোষণা দিলেন, তাঁর দলে এখন আর একজন অধিনায়ক থাকবেন না, নিদেনপক্ষে অধিনায়ক থাকবেন রজন। কেউ ফিল্ডিং সাজাবেন, কেউ বোলিং পরিবর্তন করবেন, কেউ ব্যাটিং ঠিক করবেন আবার কেউ পরিকল্পনা করবেন। শেন ওয়ার্ন শুনে মুচকি হেসে প্রশ্ন করেছেন, ‘বাকি সাতজনকে আর বাদ রাখলেন কেন! সবাইকে ক্যাপ্টেন করে দিলেই হয়!’ তাতে সমস্যা একটাই, সবাই আবার যার যার মতো খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে একসঙ্গে তিন-চারজন ব্যাট করতে নেমে না যান!
বলা হচ্ছে, আইপিএল নাকি আসলে খেলাই না, পুরো ব্যাপারটাই নাকি ব্যবসা। এই যে খেলার মধ্যে ১০ মিনিট অতিরিক্ত বিরতি দেওয়া হচ্ছে, একেও লোকজন বিজ্ঞাপন প্রচারের কৌশল হিসেবে দেখছে। এসব কথা বিশ্বাস করবেন না। নিন্দুকের অপপ্রচার। লোলিত মোদি সাহেব বলেছেন, এটা কৌশল-বিরতি; এই সময়ে খেলার বাকিটুকু নিয়ে অধিনায়কেরা ভাববেন। চার-পাঁচজন অধিনায়ক থাকলে তাঁদের ভাবার জন্য আলাদা সময় লাগবে না?
তা সময় নানাভাবেই আসছে।কৌশল-বিরতিছাড়াও আইপিএলের খেলা নানা রকম বিচিত্র বিরতি চ্ছে। বৃষ্টি-বিরতি, ফ্লাডলাইট-বিভ্রাটের বিরতি তো আছেই। এক ম্যাচে দেখা গেল, মাঠে একটা কুকুর ঢুকে পড়ায় মিনিট এগারো পায়চারি করার জন্য বিরতি হলো খেলায়। বিরতি হয়েছে ওভারের মাঝখানে বিনা নোটিশে বিকট শব্দে স্টেডিয়াম জুড়ে বাজনা বেজে ওঠায়। খেলোয়াড়েরা সব বিভ্রান্ত হয়ে খেলা বন্ধ করে এমন বাজনার উৎস খুঁজছিলেন। পরে জানা গেল, ভুলে বাজনা বেজে উঠেছে। ভুল, নাকি কৌশল?
বিরতির সবচেয়ে উৎকট চেহারাটা দেখেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইশান্ত শর্মা আর ডেকান চার্জার্সের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। কেপটাউনের নিউল্যান্ডস ভেন্যুতে একটু বেশি কেরদানি করে একটা বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গ্রান্ড স্ট্যান্ডের ওপর প্রায় ২০ মিটার উঁচু করে সামনে-পেছনে এগোতে পারে এমন একটা ক্যামেরা, যার নড়াচড়া দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। উদ্দেশ্য, খেলা চলাকালে বেশ ওপর থেকে মাঠের দৃশ্য দেখানো।
ওই ক্যামেরাই সেদিন তালগোল পাকাল। ইশান্ত বল করতে এলেন, তাঁকে ওপর থেকে অনুসরণ করল ক্যামেরা। স্ট্যান্ডের ওপর অমন নড়াচড়ায় ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্ট উইকেট ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন। আম্পায়ার সেবারের মতো ক্যামেরাওয়ালাদের নিষেধ করে বন্ধ করলেন।
পরের বল, ইশান্ত দৌড় শুরু করলেন, গিলক্রিস্ট উইকেট ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন। এবার কী? চিয়ার লিডাররা বিনা কারণে নাচানাচি শুরু করেছেন। এদেরও প্রবোধ দিয়ে ঠান্ডা করা হলো। টেক থ্রি-ইশান্ত দৌড় দিলেন, আবার গিলক্রিস্ট সরে গেলেন! আবার কী রে ভাই? আবার সেই ক্যামেরার উৎপাত!
আচ্ছা, কেউ কেউ আইপিএলকেইন্ডিয়ান পেইন লিগবলেও ডাকছে।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০০৯

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites