অনেক দিন মাঠে গিয়ে বাংলাদেশ দলের ফুটবল দেখা হয় না। বাংলাদেশ দলের আর্ন্তজাতিক ম্যাচই তো খুব একটা হয় না। তারওপর পেশাগতভাবে একটু বেশি ক্রিকেট-সম্পৃক্ত বলে যা কিছু ম্যাচ হয়, মাঠে যাওয়া হয়ে ওঠে না।
প্রায় বছর দুয়েক পর কাল মাঠে বসে জাতীয় দলের খেলা দেখলাম।
কী সৌভাগ্য! দলের অসামান্য এক জয়ের স্বাক্ষী হলাম। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা দেখতে দেখতে বারবার মনে হচ্ছিল, ছেলেগুলোর ফুটবল নিয়ে এতো মন্দ কথা কেন বলে লোকেরা! এই বৃষ্টি মাঠে, কী অসাধারণ বল নিয়ন্ত্রন করল তারা। যেখানে দ্বিগুন শক্তি লাগে, এই মাঠে দৌড়াতে, সেখানে মনে হল স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত ছুটছে আমাদের ফুটবলাররা। জাহিদ-এমিলি যেন মাঠের এ প্রান্ত, ও প্রান্ত করে বেড়ালো চোখের পলকে। এই জঘন্য মাঠেও তারা পাস করল, রিসিভ করল, ব্যাক-ভলি করলো, ওভার ল্যাপ করলো; দারুন!
এতোটুকু প্রস্তুতির সুযোগ পায় না, সারাবছর কোচিং বলে কিছু নেই, নেই আধুনিক সুযোগ সুবিধে; তারপরও ছেলেগুলো এই যা করলো, তাতে মন ভরে যাওয়ার কথা।
তবে আমার মনটা আসলে ভরিয়ে দিলেন মাঠের বাইরের কয়েক জন মানুষ: দর্শক। ঝরো ঝরো বৃষ্টির মধ্যে গ্যালারিতে বসে সমানে তারা চিৎকার করছেন ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে। মাথার ওপর আকাশ ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই। সারা শরীর ভিজে চুপচুপ করছে, বৃষ্টিতে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে; তার মধ্যেও চলছে মানুষগুলোর চিৎকার।
কয়েকটা ছেলে, পোশাক দেখে মনে হল মাদ্রাসার ছাত্র, পাজামা-পাঞ্জাবী সব ভিজে একসার। দেখে মনে হয় মাত্র পুকুর থেকে উঠে এলো। ওই প্রবল বৃষ্টির মধ্যে তারা বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে সোচ্চার। একজন মানুষ, দেখে মনে হল কোনো চায়ের দোকানদান বা রিকশাচালক হবে; পরনের লুঙ্গি-জামা সব ভিজে চুপচুপে। একটা চেয়ারের ওপর দাড়িয়ে তিনিও দু হাত শূন্যে তুলে চিৎকার করছেন।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠের খেলোয়াড়দেরও আর ঠিকমতো চেনা যাচ্ছে না। জায়ান্ট স্ক্রিনে তাকিয়ে মনে হচ্ছে বিদেশী কোনো খেলার সম্প্রচার দেখছি। তুষারপাতের মধ্যে বল নিয়ে ছুটে চলেছেন মেসি-জাভিরা।
ক্যামেরা ঘুরছে গ্যালারিতে। মনে হচ্ছে এক টুকরো বাংলাদেশ যেন উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ছোট্ট এই গ্যালারিতে। যে বাংলাদেশ বৃষ্টি মানে না, ঝড় মানে না; শুধু জানে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com